সবজি চাষের ক্যালেন্ডার | শাক-সবজির উপযুক্ত চাষের সময় নির্বাচন

বছরের বারো মাস জুড়েই শাক-সবজি চাষাবাদ চলতে থাকে । এজন্য একটি বারোমাস ব্যাপি সবজি চাষের ক্যালেন্ডার বাগানিদের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে ।একেক মৌসুমে একেক রকম ফসল চাষাবাদ করা হয় । আবার ফসলের তালিকাও বেশ বড় । তাই একটা ক্যালেন্ডারের মতো সহজ তালিকা 

সকল বাগানীর‌ কাজে আসবে । 

( এখানে প্রচলিত ক্যালেন্ডারের মতো করে মাস অনুযায়ী শাক-সবজির নামের তালিকা প্রণয়ন এর পাশাপাশি সবজি অনুযায়ী উপযুক্ত সময় ও চারা রোপণ এর উপযোগি হতে সময় ব্যাখ্যা করা হয়েছে আলাদা করে । আবার ৫০ এর অধিক শাক-সবজির পাশাপাশি কিছু মসলা,শস্যদানা ও ফলেরও চাষাবাদ সময় উল্লেখ করা হয়েছে ।) 

সূচিপত্র –

  • প্রধান তিনটি ফসল উৎপাদন মৌসুম
  • সবজি চাষের ক্যালেন্ডার (চার্ট)
  • শীতকালীন শাক-সবজি ও ফল সমূহ
  • গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজি সমূহ
  • বর্ষাকালীন শাক-সবজি সমূহ

প্রধান তিনটি ফসল উৎপাদন মৌসুম : 

বর্তমানে আধুনিক কৃষি পদ্ধতির মাধ্যমে সারা বছরই যেকোন ফসল উৎপাদন সম্ভব । এছাড়াও সারা বছর চাষ উপযোগী বিভিন্ন জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে, হাইব্রিড বিভিন্ন জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে । 

তবে ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে এই চাষাবাদের সময়কালকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় । এই তিন সময়ের উপর ভিত্তি করে সবজি চাষের ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করা হয়েছে । 

১. শীতকালীন বা রবি মৌসুম-    মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য মার্চ  অর্থাৎ আশ্বিন থেকে ফাল্গুন মাস ব্যাপি রবি মৌসুম । এই সময় নানান রকম রং বেরঙের রবি শস্যের চাষ হয়। সবচেয়ে বেশি ফসল উৎপাদন এই মৌসুমে করা হয় । অর্থাৎ, সবজি চাষের ক্যালেন্ডার এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো রবি মৌসুম । 

২. গ্রীষ্মকালীন বা খরিপ-১ মৌসুম –    মার্চ থেকে জুলাই মাস অর্থাৎ ফাল্গুন থেকে আষাঢ় মাস ব্যাপি গ্রীষ্মকালীন চাষাবাদের সময় । এসময়ও বিভিন্ন রকম সবজি উৎপাদন করা হয় । 

৩. বর্ষাকালীন বা খরিপ-২ মৌসুম –    মধ্য জুলাই থেকে মধ্য অক্টোবর মাস অর্থাৎ আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস বর্ষাকালীন চাষাবাদের অন্তর্ভুক্ত । এসময় তেমন শাক-সবজি উৎপাদন করা সম্ভব হয় না কারণ অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও বন্যার পাদুর্ভাব দেখা যায় এই সময় । তবে আগাম রবি শস্যের চাষাবাদ করার জন্য এই‌সময় বীজ বপন, চারা রোপণ করতে হয় ।

সবজি চাষের ক্যালেন্ডার (চার্ট): 

চার্টে সবজির নাম এবং চাষাবাদের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় দেওয়া হয়েছে ।( চাষাবাদ এর সময় বলতে বীজ বপন এবং চারা রোপণের উপযুক্ত সময় উল্লেখ করা হয়েছে । ) 

চার্টে আপনার কাংখিত সবজির নাম উল্লেখ না থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন। 

শীতকালীন শাক-সবজি ও ফল সমূহ: 

সাধারণত শীতকালীন চাষাবাদের জন্য বীজ বপন ও চারা রোপণ এই মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই করতে হয় । স্বল্পকালীন শাক-সবজির ক্ষেত্রে মৌসুম চলাকালীন একাধিকবার চাষ‌ করা যায় । 

এখানে ফসলের নাম এবং চাষাবাদের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় বর্ণনা করা হলো ।( চাষাবাদ এর সময় বলতে বীজ বপন এবং চারা রোপণের উপযুক্ত সময় উল্লেখ করা হবে । ) 

১. আলু –   নভেম্বর মাস উপযুক্ত সময় তবে এর কিছু আগে ও পরেও বীজ বপন করা যায় । 

২. বেগুন –   আগস্ট থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বীজ বপন  করা যায় । ৩০- ৩৫ দিন বয়সের ৫ থেকে ৬ পাতা বিশিষ্ট চারা মূল জমিতে লাগানো হয় । তবে বর্তমানে বেগুনের সারা বছর চাষ উপযোগী বিভিন্ন জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে ।

৩. টমেটো –  শীতকালীন চাষের জন্য সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসে বীজ বপন করতে হয় । আর  গ্রীষ্মকালীন চাষের জন্য মে- জুলাই মাসে বীজ বপন করতে হয় । ৩০ থেকে ৩৫ দিন বয়সের ৪-৬ পাতা বিশিষ্ট চারা মূল জমিতে রোপন করতে হয় । 

৪. মরিচ –   শীতকালীন চাষের জন্য সেপ্টেম্বর মাস আর গ্রীষ্মকালীন চাষের জন্য ফেব্রুয়ারি – মার্চ মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময় । ৩৫-৪০ দিন বয়সে চারা মুল জমিতে লাগানোর উপযোগি হয় । তবে বর্তমানে মরিচ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে যা দীর্ঘকালীন ফলন দিতে সক্ষম । 

৫. ফুলকপি –   আগাম চাষের জন্য আগস্ট মাসে,  মধ্যম জাতের জন্য সেপ্টেম্বর মাসে এবং নাবি জাতের জন্য অক্টোবর মাসে বীজ বপন করতে হয় । ৩০-৩৫ দিন বয়সে চারা মুল জমিতে লাগানোর উপযুক্ত হয় । 

৬. বাঁধাকপি –   আগাম চাষের জন্য আগস্ট মাস,  মধ্যম জাতের জন্য সেপ্টেম্বর মাস আর নাবি জাতের জন্য নভেম্বর থেকে মধ্য ডিসেম্বর পর্যন্ত বীজ বপন করা যায় । ৩০-৩৫ দিন বয়সে চারা রোপণ এর উপযুক্ত হয় ।

৭. ওলকপি –   মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত বীজ বপন করা যায় । ৩০-৩৫ দিন বয়সে ৫-৬ পাতা বিশিষ্ট চারা মূল জমিতে লাগানো হয় । 

৮. লেটুস –   নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বীজ বপন করা যায় । ২০-২২ দিন বয়সে চারা রোপণ এর উপযোগি হয় । 

৯. বাটিশাক বা বকচয় –   মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য ডিসেম্বর পর্যন্ত বীজ বপন করা যায় । তবে এটি সারা বছর চাষ করা যায়, কিন্তু শীতকালে এটির বৃদ্ধি বেশি ও স্বাদ বেশি থাকে । এটি স্বল্পকালীন শাক হওয়ার এক শীত মৌসুমে কয়েক বার চাষ করা সম্ভব । 

১০. মূলা –  মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য নভেম্বর বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। ৪০-৪৫ দিন বয়সে মূলা খাওয়ার উপযোগী হয় ।‌

১১. গাজর –  নভেম্বর মাস সবচেয়ে উপযোগী সময় তবে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বর এর মাঝামাঝি পর্যন্ত বীজ বপন করা যায় । ৭০-১২০ দিনে গাজর তুলার উপযোগি হয় । 

১২. শালগম –   নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস বীজ বোনার উপযুক্ত সময় । 

১৩. বিটরুট –   মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর উপযুক্ত সময় বীজ বপন এর । 

১৪. করলা ও উচ্ছে –   ছোট, গোলাকার, বেশি তিতা সেগুলোকে উচ্ছে বলা হয় । আর বড়,লম্বা ও কিছুটা কম তিতা সেগুলোকে করলা বলা হয় । উচ্ছে শীতকালে চাষ করা হয় তবে যেকোন সময় হতে পারে। 

১৫. লাউ –   শীতকালে আগস্ট – অক্টোবর এবং গ্রীষ্মকালে ফেব্রুয়ারি- মে মাসে বীজ বপন করতে হয় । ১৬-১৭ দিন বয়সে চারা রোপণ এর উপযোগি হয় । তবে লাউ সারা বছর চাষ করা যায়। 

১৬. স্কোয়াশ-   অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর বীজ ভবনের উপযুক্ত সময় । ১৬-১৭ দিন বয়সে চারা রোপণের উপযোগী হয় ।‌

১৭. মিষ্টিকুমড়া –   শীতকালীন চাষের জন্য অক্টোবর- নভেম্বর এবং গ্রীষ্মকালীন চাষের জন্য ফেব্রুয়ারি – মার্চ মাস উপযুক্ত সময় বীজ বপন এর ।‌ ১৬-২০ দিন বয়সে চারা রোপণ উপযোগি হয় ।

১৮. শিম –   জুন মাস বীজ বপনের জন্য উত্তম । আর  গ্রীষ্মকালীন জাত সারা বছর চাষ করা যায় । 

১৯. ঝাড় শিম –   অক্টোবর – নভেম্বর বীজ বপনের উপযুক্ত সময় ।

২০. ক্যাপসিকাম –   অক্টোবর – নভেম্বর মাস বীজ বপন এর উপযুক্ত সময় । ৩০ দিন বয়সের চারা মূল জমিতে লাগাতে হয় ।

২১. পেঁয়াজ –  শীতে অক্টোবর – নভেম্বর বীজ বপনের উপযুক্ত সময় ।  ৫০ – ৫৫ দিন বয়সে চারা মূল জমিতে রোপন করতে হয় ।  তবে শীতকালে অক্টোবর – জানুয়ারি পর্যন্ত চারা রোপন করা যায় ।  এমনকি গ্রীষ্মকাল ও বর্ষাকালীন চাষ উপযোগী জাত রয়েছে পেঁয়াজ এর । 

২২. রসুন –  মধ্য অক্টোবর – মধ্য নভেম্বর রসুন রোপণ এর  উপযুক্ত সময় । 

২৩. ধনিয়া –  অক্টোবর – মধ্য নভেম্বর বীজ বপন এর উত্তম সময় । তবে সারা বছর চাষ উপযোগী হাইব্রিড জাত রয়েছে ধনিয়ার । 

২৪. মিষ্টি আলু –  অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত লতা রোপণ করতে হয় । 

২৫. মটরশুটি –  নভেম্বর মাস বীজ বপন এর উত্তম সময় । নভেম্বর – ফেব্রুয়ারি এই চার মাস মটরশুটি চাষ এর অনূকুল আবহাওয়া বিরাজ করে । অক্টোবরেও বীজ বপন করা যায় । 

২৬. ছোলা –  মধ্য নভেম্বর –  ডিসেম্বর মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময় । 

২৭. তিসি –  মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর বীজ বপন করতে হয় ।‌

২৮. সরিষা –  মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর উপযুক্ত সময় । তবে , শাক এর জন্য চাষ করলে ডিসেম্বর -জানুয়ারিতেও চাষ করা যায় । 

২৯. পালং শাক –  মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য ডিসেম্বর বীজ বপন করতে হয় । 

৩০. লালশাক –  সার বছর করা যায় তবে শীতে ফলন ও স্বাদ ভালো হয় । স্বল্পকালীন হওয়ায় এক শীত মৌসুমে অনেক বার চাষ করা সম্ভব । 

৩১. মেথি শাক –  অক্টোবর – ডিসেম্বর পর্যন্ত বীজ বপন করা যায় । 

৩২. ব্রোকলি বা সবুজ ফুলকপি – সেপ্টেম্বর এর শেষ সপ্তাহ উপযুক্ত সময় বীজ বপন এর । তবে অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত বীজ বুনা যায় । 

৩৩. স্ট্রবেরী –  শীত মৌসুমে চাষ করা হয় ।‌ অক্টোবর মাস উপযুক্ত সময় চারা রোপণ এর । তবে নভেম্বর – ডিসেম্বর পর্যন্ত চারা রোপণ করা যায় ‌‌।

গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজি সমূহ : 

গ্রীষ্মকালীন চাষের জন্য বীজ বপন ও চারা তৈরি শীতের প্রকোপ কিছুটা কমলেই শুরু করে দিতে হয় ।  অনেক ফসল আছে যেগুলো শীতে এবং গ্রীষ্মে উভয় সময় করা যায় তবে গ্রীষ্মে সেই ফসলগুলো চাষ করার জন্য গ্রীষ্মকালীন জাত বেছে নিতে হবে । 

১. ঝিঙা –  ফেব্রুয়ারি – মার্চ মাস উপযুক্ত সময় বীজবপনের । ১৬ – ১৭ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হয় ।  

২. করলা –  ফেব্রুয়ারি – মে মাস পর্যন্ত করলা বীজ বপন করা যায় । তবে করলা সারা বছর চাষ করা যায় এমন অনেক জাত রয়েছে ।‌

৩. পটল –  সাধারণত খরিপ মৌসুমে চাষ করা হয় । সবচেয়ে ভালো সময় বর্ষার শেষে অক্টোবর – নভেম্বর মাস চারা রোপণ এর । এতে জীবনকাল বেশি হওয়ায় ফলন বেশি হয় ‌। তবে শীতের শেষে ফেব্রুয়ারি – মার্চ মাস চারা রোপণ করা যায় । 

৪. কাঁকড়োল –  মধ্য এপ্রিল – মধ্য জুন উপযুক্ত সময় কাকড়োল এর কন্দ রোপণ এর । 

৫. লাউ –  গ্রীষ্মকালীন চাষের জন্য ফেব্রুয়ারি- মে মাস বীজ বপন এর উপযুক্ত সময় । 

৬. চালকুমড়া –  সারা বছর করা যায় । তবে ফেব্রুয়ারি – মে মাস বীজ বপন এর উত্তম সময় । ১৬-২০ দিন বয়সে চারা রোপণের উপযোগী হয় । 

৭. ধুন্দল –  ফেব্রুয়ারি – মার্চ মাস উপযুক্ত সময় । ১৬-১৭ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হয় । 

৮. ঢেঁড়স –  সারা বছর চাষ করা যায় । তবে সাধারণত খরিপ মৌসুমে এর চাষ করা হয় । মার্চ – এপ্রিল উপযুক্ত সময় বীজ বপন এর । 

৯. চিচিঙ্গা –  খরিপ মৌসুমে চাষ করা হয়। ফেব্রুয়ারি -জুন মাস পর্যন্ত বীজ বপন করা যায় । ১৫-২০ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হয় । 

১০. শসা-খিরা –  ফেব্রুয়ারি – মার্চ মাস বীজ বপন এর উপযুক্ত সময় । চারা ১৬-২০ দিন‌ বয়সে রোপণ এর উপযোগি হয় । 

১১. হলুদ –  মার্চ এর শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিল এর শেষ পর্যন্ত রোপণ করা যায় ।

১২. আদা –  এপ্রিল – মে মাসে রোপণ করতে হয় । তবে এপ্রিল এর শুরুতে করলে ভালো ফলন পাওয়া যায় । 

১৩. পুঁই শাক –  শীতের শেষে বীজ বপন করতে হয় ।‌ ফেব্রুয়ারি – মার্চ উত্তম সময় ।‌ ১৫-২০ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হয় । 

১৪. গীমাকলমি –  এপ্রিল – জুলাই পর্যন্ত বীজ বপন করা যায় । বর্ষায় এর ফলন অনেক ভালো হয় । কান্ড থেকেও চারা হয় ।‌

১৫. পাট শাক –  মার্চ – মে মাস উত্তম সময় ।‌

১৬. ভূট্টা –  খরিপ মৌসুমে মধ্য ফেব্রুয়ারি – মার্চ মাস বীজ বপন করতে হয় ।‌ শীতকালীন চাষের জন্য অক্টোবর-নভেম্বর বীজ বপন করতে হয় ।‌

১৭. তরমুজ –  ফেব্রুয়ারি মাসে বীজ বপন করতে হয় । ২-৩ সপ্তাহ বয়সের ৫-৬ পাতাযুক্ত চারা রোপণ করতে হয় । 

১৮. বাঙ্গি –  মার্চ – এপ্রিল মাস বীজ বপন এর উপযুক্ত সময় ।‌

বর্ষাকালীন শাক-সবজি সমূহ : 

বর্ষার প্রচুর বৃষ্টিপাত ও বন্যায় ফসল নষ্ট হয়ে যায় ‌। এজন্য খুব বেশি শাক-সবজি উৎপাদন সম্ভব হয় না বর্ষায় । তাই, বর্ষাকালকে সবজি চাষের ক্যালেন্ডার এর একটি কম গুরুত্বপূর্ণ সময় বলা চলে । 

সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাসের দিকে বৃষ্টি কমতে শুরু করলে তখন রবি শস্য চাষের জন্য বীজ বপন, চারা তৈরি , জমি তৈরি এসব প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করে দিতে হয় । সাধারণত বর্ষায় যেসব ফসল চাষ করা যায় – 

১. বিভিন্ন রকম কচু –  কচু বর্ষায় ভালো হয় । তবে এর জন্য গ্রীষ্মকালেই কচুর চারা রোপণ সম্পন্ন করতে হয় । লতিরাজ কচু , মুখিকচু , কাষ্ঠল কচু ইত্যাদি বর্ষায় সবজির ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে যখন অন্যান্য সবজির উৎপাদন ব্যাহত হয় । 

২. বরবটি –  মার্চ – আগস্ট মাস পর্যন্ত বীজ বপন করা যায় । ৪০-৪৫ দিন পর ফুল -ফল আসতে শুরু করে । 

৩. ডাঁটা –  সারা বছর চাষ করা যায় তবে খরিপ মৌসুমেই চাষ বেশি হয় ।‌

৪. মাসকলাই –  আগস্ট – সেপ্টেম্বর মাস বীজ বপন এর উপযুক্ত সময় । 

৫. তিল –  বর্ষাকালীন চাষের জন্য মধ্য আগস্ট – মধ্য সেপ্টেম্বর বীজ বপন করতে হয় ।‌ আর গ্রীষ্মকালীন চাষের জন্য মধ্য ফেব্রুয়ারি- মধ্য এপ্রিল বীজ বপন করতে হয় । 

৬. চীনাবাদাম –  মধ্য জুলাই – মধ্য সেপ্টেম্বর বীজ বপন করতে হয় । তবে চিনা বাদাম শীতকালীনও চাষাবাদ করা হয় । 

৭. টমেটো –  মে- জুলাই মাসে বর্ষাকালীন টমেটোর চারা রোপণ করতে হয় । বর্ষাকালীন চাষের জন্য জংলি বেগুনে কলম করা চারা ব্যবহার করা হয় । এই গ্রাফট করা চারা অতি বৃষ্টিতেও মরে যায় না । 

বর্তমানে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ঘটছে ‌। যার ফলে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে যে কোন ধরণের ফসল যেকোন সময় চাষ করা সম্ভব হচ্ছে । অর্থাৎ, অদূর ভবিষ্যতে এই রকম সবজি চাষের ক্যালেন্ডার খুব একটা কাজে আসবে না । 

Leave a Reply