গাছ অনুযায়ী ১-৩ বছর পর পর টবের মাটি পরিবর্তন এর প্রয়োজন পরে । এসময় নতুন করে পটিং মিক্স তৈরি করে ব্যবহার করা হয় । তবে নতুন পটিং মিক্স ব্যবহার এর পাশাপাশি টবের পুরানো মাটি ব্যবহার করা যাবে। এজন্য কিছু ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে, সরাসরি পুরাতন মাটি ব্যবহার করা যাবে না।
সূচিপত্র –
- কেনো পুরানো মাটি সরাসরি ব্যবহার করা যায় না?
- পুরানো মাটি ব্যবহার করতে হলে যা করতে হবে
১. মাটির খাদ্য উপাদান বৃদ্ধি
২. মাটিকে রোগ-জীবাণু মুক্ত করা
কেনো পুরানো মাটি সরাসরি ব্যবহার করা যায় না?
বাগানে টবের মাটি পরিবর্তন এর প্রয়োজন হয় এবং স্বল্পকালিন মৌসুমি ফুলের গাছ মারা যাওয়ার পর আবার সেই টবে গাছ লাগানোর প্রয়োজন পরে । অর্থাৎ, পুরাতন মাটি পুনরায় ব্যবহারের প্রয়োজন পরে। কিন্তু , পুরাতন মাটিতে খাদ্যোপাদান এর ঘাটতি থাকে এবং নানান রকম ক্ষতিকারক ভাইরাস,ব্যাকটেরিয়া,নেমাটোড,ছত্রাক বাসা বাঁধে। এসব ক্ষতিকারক অণুজীব নানান রোগ সহ গাছের মৃত্যুরও কারণ হতে পারে । তাই টবের পুরানো মাটি সরাসরি ব্যবহার না করে কিছু ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করে তারপর ব্যবহার করতে হয় ।
পুরানো মাটি ব্যবহার করতে হলে যা করতে হবে:
পুরাতন পটিং মিক্স ব্যবহার করতে হলে দুইটা কাজ করতে হবে । তা হলো – খাদ্যোপাদান বৃদ্ধি করতে হবে এবং রোগজীবাণু ধ্বংস তথা মাটি শোধন করতে হবে ।
১.মাটির খাদ্য উপাদান বৃদ্ধি অর্থাৎ মাটিকে পুনরায় জীবন দেওয়া:
পুরাতন পটিং মিক্সে খাদ্য উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয় । বিশেষ করে মাটির জৈব উপাদান মারাত্মক ভাবে হ্রাস পায় । এর জন্য পুরাতন পটিং মিক্স এ ফলন অনেক কমে যায় । খাদ্য উপাদান বৃদ্ধি করার জন্য জৈব সার বা রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় ।
১.১ জৈব সার প্রয়োগ: জৈব উপাদান বৃদ্ধি করার জন্য এক ভাগ পুরাতন পটিং মিক্স এর সাথে এক ভাগ নতুন পটিং মিক্স মিশাতে হবে । এতে যে নতুন মিশ্রণ হবে তার সাথে ২৫% কম্পোস্ট বা গোবর সার মেশাতে হবে । কম্পোস্ট/গোবর সার এর পরিমাণ এর চেয়ে বেশিও ব্যবহার করা যাবে ৩০-৩৫% পর্যন্ত । এছাড়াও ১-২ মাস পর পর টবের মাটিতে জৈব সার নিয়মিত উপরি প্রয়োগ করলে টবের মাটি ঠিক থাকবে।
১.২ রাসায়নিক সার ব্যবহার: অধিক ফলন নিশ্চিত করতে টবের পুরানো মাটি তে জৈব সার এর পাশাপাশি রাসায়নিক সারও প্রয়োগ করতে হবে। তবে কেউ যদি রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে না চান তাহলেও হবে । রাসায়নিক সার হিসেবে নাইট্রোজেন সার (ইউরিয়া), ফসফরাস সার ( TSP বা DAP) , পটাস সার ( MOP বা SOP ) এই তিনটা অব্যষই ব্যবহার করতে হবে । এর পাশাপাশি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জাতীয় খাদ্য উপাদান মেশানো যেতে পারে।
২. মাটি শোধন অর্থাৎ মাটিকে রোগ-জীবাণু মুক্ত করা –
টবের পুরানো মাটি শোধন তথা মাটি জীবাণুমুক্ত বিভিন্ন ভাবে করা যায় । মাটিতে ক্ষতিকর অণুজীব যেমন থাকে এর সাথে উপকারী বিভিন্ন অণুজীবও থাকে । তাই , মাটি এমন ভাবে শোধন করা উচিত যাতে খুব কম সংখ্যক উপকারি অণুজীব ধ্বংস হয় ।
এর মধ্যে সবচেয়ে সহজ দুইটি প্রক্রিয়া আলোচনা করা হলো –
২.১. সোলারাইজেশন –
এটি একটি জৈব প্রক্রিয়া, এতে রাসায়নিক কোন উপাদান মেশানোর প্রয়োজন পরে না ।
এই প্রক্রিয়ায় প্রথমে পুরাতন পটিং মিক্স নিয়ে তাতে থাকা বড় বড় শিকড় ,পাতা-ডাল , টবের নিচের ইটের টুকরা এসব যদি থাকে তাহলে আলাদা করতে হবে। তারপর মাটি গুলো একটি ঢাকনা যুক্ত পাত্রে বা ছিদ্র বিহীন কালো পলিথিন ব্যাগে ভরতে হবে। মাটি একদম শুকনো থাকলে তাতে কিছু পরিমাণ পানি দিয়ে মাটি কিছুটা ভিজা ভিজা করতে হবে। তারপর পাত্র বা পলিথিন ব্যাগ এর মুখ ভালো করে বন্ধ করে দিতে হবে যাতে বাতাস প্রবেশ না করে। ব্যাগ বা পাত্রটি রোদের মধ্যে রেখে দিতে হবে। এভাবে ৪ সপ্তাহ মানে প্রায় এক মাস রোদের মধ্যে রেখে দিতে হবে।
এভাবে রোদের মধ্যে রেখে দিলে ব্যাগ বা পাত্রের ভিতরে থাকা মাটিতে ৫০° সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা বিরাজ করবে , যা অধিকাংশ ক্ষতিকর অণুজীব ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট ।
২.২. ছত্রাকনাশক ও দানাদার কীটনাশক প্রয়োগ –
এটি একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় মাটির সাথে ছত্রাকনাশক পাউডার মিশাতে হয় । ছত্রাকনাশক হিসেবে কার্বন্ডাজিম ব্যবহার করতে হবে আর দানাদার কীটনাশক হিসেবে কার্বোফুরান ।
প্রতি ১২ ইঞ্চি টবের সমপরিমাণ মাটিতে এক চা চামচ ছত্রাকনাশক পাউডার ও এক গ্রাম কার্বোফুরান মেশাতে হবে । এগুলো মেশানোর পর মাটিতে কিছু পরিমাণ পানি দিয়ে ১৫ দিন রেখে দিয়ে তারপর সেই মাটি ব্যবহার করতে হবে ।
উক্ত ছত্রাকনাশক,
বাংলাদেশে – ইউনিসাফ , ম্যানসার এসব নামে পাওয়া যায় , আর
ভারতে – saaf নামে পাওয়া যায় ।
