আম গাছে কলম করার সহজ পদ্ধতি

আমের কলম করার একটি সহজ ও ঝামেলা বিহীন পদ্ধতি হলো স্টোন গ্রাফটিং। 

এই গ্রাফটিং পদ্ধতিতে দুইটি প্রধান জিনিস দরকার একটি রুট স্টক আরেকটি হলো সায়ন । 

রুট স্টক হিসেবে এই কলম পদ্ধতিতে একদম ছোট আমের চারা ব্যবহার করা হয়। আমের চারায় সর্ব প্রথম ধাপের পাতা বের হলে সেগুলোকে স্টক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। আর এই ধরনের চারা আমের পুরো সিজন জুড়ে সব জায়গায় সহজেই পাওয়া যায় ।

এই কলম পদ্ধতিতে আমের চারার সাথে বীজ পত্র বা স্টোন থেকে যায় । এজন্য একে স্টোন গ্রাফটিং বলা হয় । এই বীজপত্রে প্রচুর খাদ্য সঞ্চিত থাকে যা থেকে খাদ্য নিয়ে কলম জোড়া লাগে । 

এবার সায়ন নিয়ে আলোচনা করা যাক – 

সায়ন হিসেবে কাংখিত উন্নত জাতের ডাল নিতে হবে। এই ডাল নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। ডাল গুলো একদম কচি হলে চলবে না, হালকা সবুজ রঙের ডাল গুলো কচি হয়ে থাকে। 

গাঢ় সবুজ-কালো রঙের বয়ষ্ক ডাল বাছাই করতে হবে এবং ডালের মাথায় যেনো কুড়ি থাকে তা খেয়াল রাখতে হবে। কুড়ি টা আর কিছু দিনের মধ্যে নতুন পাতার জম্ম দিবে এমন হলে ভালো হয়। যদি প্রধান কুড়ি না থেকে সাইড কুড়ি থাকে তাহলেও হবে।

সায়ন নির্বাচনে আরও একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে সেটা হলো ডালের দৃঢ়তা। এটার জন্য ডালে হাতের সাহায্যে চাপ দিয়ে দেখতে হবে। যদি সহজে ডালটি বেঁকে যায় তাহলে তা কলমের জন্য উপযোগী নয়‌।

এবার মূল আলোচনায় আসা যাক – 

প্রথমেই স্টক চারা মাটি থেকে শিকড় সহ তুলে নিয়ে মাটি ছাড়িয়ে ধুয়ে নিতে হবে। তবে,  চারার স্টোন টির কোন ক্ষতি করা যাবে না। 

এবার সায়নের পাতা গুলো ছাড়িয়ে নিতে হবে। এভাবে সায়ন গুলো তৈরি করে নিতে হবে। 

এবার সায়নের শেষ প্রান্তে তীর্যক ভাবে V shape কাট দিতে হবে। কাট টি একবারে করতে পারলে ভালো । কাট দেওয়ার জন্য ধারালো কিছু ব্যবহার করতে হবে তা না হলে ডালটি থেঁতলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

এবার স্টক চারার গোড়ার দিকে ২-৩ ইঞ্চি উপরে কেটে নিতে হবে। তারপর মাঝ বরাবর চির করে কেটে নিতে হবে। 

এই বার এই চির বরাবর তীর্যক ভাবে কাটা সায়ন টিকে স্থাপন করে দিতে হবে। যদি সায়ন স্টক এর চেয়ে বেশি মোটা হয় তাহলে সায়নের যেকোন এক পাশ স্টক এর এক পাশের সাথে মিলিয়ে দিতে হবে। 

এরপর জোড়া স্থানে গ্রাফটিং টেপ বা পলিথিন ফিতা পেঁচিয়ে বেঁধে দিতে হবে।

যাদের কাছে গ্রাফটিং টেপ নেই তারা ফিতার মতো করে পলিথিন কেটে নিয়ে বাধার কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। 

ফিতাটি হালকা টেনে টেনে বাঁধতে হবে যাতে জোড়াটি টাইট হয়ে সঠিক ভাবে বসে যায়। এখানে আঙ্গুল দিয়ে অতিরিক্ত চাপ দেওয়ার প্রয়োজন নেই, ফিতার চাপে যতটুকু হয় তাতেই হয়ে যাবে।  

বাঁধার কাজ হয়ে গেছে এখন একটি সিডলিং ব্যাগে মাটি ভরে চারাটি রোপণ করে দিতে হবে। 

আরও একটি কাজ বাকি রয়েছে – একটি পলিথিন ব্যাগ দিয়ে চারাটি ঢেকে দিতে হবে। এতে আদ্রর্তা বজায় থাকবে যা জোড়া বাঁধতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। 

এইবার হালকা পানি সেচ দিয়ে আলো-ছায়া যুক্ত স্থানে চারাটি রেখে দিতে হবে ‌ । 

সাধারণত ২০-২৫ দিনে জোড়া লেগে যায় এবং নতুন পাতা বের হতে থাকে। নতুন পাতা বের হওয়া শুরু হলে পলিথিন ব্যাগটি খুলে দিতে হবে।

Leave a Reply