You are currently viewing বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি | ছাদে সহজভাবে আদা চাষ

বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি | ছাদে সহজভাবে আদা চাষ

বস্তায় আদা চাষ বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি । পতিত জমি, ফল বাগানের গাছের ছায়ায়, ছাদে অল্প খরচে ও ঝামেলা বিহীন ভাবে চাষ করা যায়। আবার প্লাস্টিকের সিমেন্টের বস্তা,চালের বস্তা,সারের বস্তা,আটার বস্তা এগুলো সব জায়গায় পাওয়া যায় আর দাম প্রতিটি ৫-১৫ টাকা । আবার বস্তাতে জলাবদ্ধতার সমস্যাও দেখা যায় না। এসব কারণে বস্তায় আদা চাষ বেশ সুবিধাজনক । এ পদ্ধতিতে ছাদেও চাষ সম্ভব, ২-৩ বস্তায় চাষ করে একটি পরিবারের চাহিদা মেটানো সম্ভব।   

সূচিপত্র –

আদা চাষের সময় ও উপযুক্ত পরিবেশ (রোদ-আলো): 

এপ্রিল থেকে মে মাস আদার বীজ বপন এর উপযুক্ত সময়। তবে এপ্রিল এর শুরুতে লাগালে গাছ দ্রুত বড় হতে থাকে, অর্থাৎ ফলন বেশি হয় । 

আদা গাছ রোদ-আলো পূর্ণ জায়গার পাশাপাশি আংশিক ছায়াতেও ভালো ফলন হয়। অথাৎ বড় গাছের নিচে বা এমন জায়গা যেখানে রোদের পাশাপাশি ছায়া থাকে সেখানেও চাষ করা যাবে। ছাদে বড় বড় ড্রামে লাগানো গাছের পাশে ছায়ায় আদার দারুন ফলন হবে । আবার কম রোদ পায় এমন বারান্দায়ও চাইলে বস্তায় আদা চাষ করা যাবে । 

আদার চারা তৈরি পদ্ধতি : 

বস্তায় আদা চাষ এর জন্য আলাদা করে বীজতলায় চারা করতে হয় না, সরাসরি বীজ আদা রোপণ করলেই হয়ে যায় । 

বাজারে বীজ আদা কিনতে পাওয়া যায়, বীজ আদা বলতে অংকুর বের হওয়া এমন আদাকে বুঝায় । 

শীতের শেষে ঘরে রেখে দেওয়া আদাতে অংকুর বের হতে দেখা যায়। এমন আদা রোপণ করলেও চলবে । 

বীজ আদা তৈরি পদ্ধতি – 

পুরনো আদা নিয়ে প্রথমে তা শোধন করে নিতে হবে। শোধন করার জন্য ১ লিটার পানিতে ১ গ্রাম ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক পাউডার মিশিয়ে ,সেই পানিতে আদা গুলো ৩০ মিনিট এর মতো রেখে দিতে হবে। 

তারপর আদা গুলো পানি থেকে তুলে বাতাসে শুকিয়ে নিতে হবে । এরপর আদা গুলোকে খড়কুটো বা মোটা কাপড় বা চটের বস্তা দিয়ে কিছু দিন অন্ধকার কোনো জায়গায় ঢেকে রাখলে অংকুর বের হওয়া শুরু হবে । অংকুর বের হওয়া আদা মাটিতে বপন করে দিলে কয়েক দিনের মধ্যে সুন্দর চারা বের হবে। 

পিলাইতোলা-

আদা রোপণের পর গাছে ৩-৪ পর্ব পাতা বের হয়ে গাছ একদম সেট হয়ে গেলে তখন বীজ আদা তুলে নেওয়া যায়। অর্থাৎ, গাছ,শিকড় ক্ষতি না করে বীজ হিসেবে ব্যবহার হওয়া আদা টুকু মাটি খুঁড়ে তুলে নেওয়া হয় । 

এই পদ্ধতিটিকে পিলাই তোলা বলে।

এতে গাছের বৃদ্ধির তেমন কোন ক্ষতি হয় না।

তুলে নেওয়া বীজ আদা টুকু যথারিতী রান্না সহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা যায়। 

বস্তা প্রস্তুতকরণ ও আদা বপন : 

বস্তা হিসেবে সিমেন্টের বস্তা সহজলভ্য ও সাইজেও উপযুক্ত। তবে সিমেন্টের বস্তার চেয়ে মোটা প্লাস্টিকের বস্তা (ক্যামিকেলের বস্তা,চালের বস্তা) বেশি উপযোগী হবে। 

কারণ – সিমেন্টের বস্তা কিছু দিন পরে নষ্ট হয়ে ছিঁড়ে -ফেটে যায়। এজন্য – সিমেন্টের বস্তা ব্যবহার করলে ডাবল লেয়ার তৈরি করা, মানে- একটি বস্তার মধ্যে আরোও একটি বস্তা পুরে দিয়ে তারপর মাটি ভরে আদা বপন করা । 

আর বস্তায় কোন ছিদ্র করতে হবে না, কারণ এমনিতে প্রচুর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে সিমেন্টের বস্তায় ,যা দিয়ে সহজেই অতিরিক্ত পানি, বৃষ্টির পানি বের হয়ে যেতে পারে।  

প্রতিটি বস্তায় ৩-৪ ঝোপ আদা (বহু শাখা যুক্ত আদা) রোপণ করা যায় , যা থেকে ৮-১৮ টি বা আরও বেশি আদা গাছ হতে পারে। অর্থাৎ বস্তা প্রতি ৫০-৮০ গ্রাম বীজ আদার প্রয়োজন হয়।

বস্তার জন্য মাটি প্রস্তুত প্রণালী : 

(Note: ১ টেবিল চামচ= ১০-১২ গ্রাম ; ১ চা চামচ= ৪ গ্রাম ; ১ টেবিল চামচ= ৩ চা চামচ ; ১ লিটার মাটি = ১,২-১.৫ কেজি) 

আদা ঝুরঝুরে ও অধিক জৈব পদার্থ যুক্ত মাটিতে ভালো হয়। আবার আদা দাঁড়ানো পানি সহ্য করতে পারে না, পানি জমে থাকলে আদায় সহজে ছত্রাক এর আক্রমণ হয় । 

তাই,মাটি তৈরিতে – 

১. দোআঁশ মাটি ৫০% , গোবর পঁচা ৩০% আর ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করলে দোআঁশ মাটি ৬০% , ভার্মি কম্পোস্ট ২০% আর বাকি ২০% এর জন্য কোকোপিট ১০% আর নদীর লাল বালু ১০% অথবা ২০% নদীর লাল বালু মেশাতে হবে ।   

২. রাসায়নিক সার- মাটি তৈরির সময় প্রত্যেক ৫ লিটার মাটিতে ১ চা চামচ টিএসপি (TSP) বা ডিএপি (DAP) সার + হাফ চা চামচ এমওপি (MOP) সার মেশাতে হবে ।

৩. এভাবে মাটি প্রস্তুত করে ১০-১৫ দিন রেখে দিতে হবে ‌। তারপর আদা বীজ বপন করতে হবে।

বীজ বপন পরবর্তী সার ব্যবস্থাপনা : 

বস্তায় আদা চাষ এর জন্য গাছ হওয়ার পর দুই বার রাসায়নিক সার উপরি প্রয়োগ করলে ভালো ফলন হয়।

(বস্তা প্রতি মাটির পরিমাপ বের করে নিয়ে সে অনুযায়ী রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে)  

১. বীজ বপন এর ৫০ দিন পর ৫ লিটার আয়তনের সমপরিমাণ মাটির জন্য হাফ চা চামচ ইউরিয়া সার এবং হাফ চা চামচ পটাস সার (MOP) মাটিতে ছিটিয়ে দিয়ে নিড়ানি দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগের পরের দিন পানি সেচ দিতে হবে। 

২. একই পরিমাণ ইউরিয়া ও পটাস সার পুনরায় বীজ বপন এর ৮০-১০০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। এই সময় ইউরিয়া ও পটাস সারের পাশাপাশি হাফ চা চামচ TSP সার প্রয়োগ করা যায় । 

এই দুই বারের পর আর রাসায়নিক সার প্রয়োগ এর প্রয়োজন পরে না। তবে, পরবর্তীতে কোন সারের অভাব জনিত লক্ষণ দেখা দিলে সে সার প্রয়োজন মতো ব্যবহার করতে হবে।

জৈব সার – 

চারা রোপণ এর পর প্রতি ১৫ দিন পর পর ৫ লিটার সমপরিমাণ টবের মাটির জন্য এক মুঠো করে ভার্মি কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। বস্তার উপরের মাটি আলগা করে জৈব সার মাটিতে ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে। 

আদা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ : 

বীজ বপন এর ৯-১০ মাস পর আদা তোলার উপযোগী হয় । অর্থাৎ, এপ্রিল-মে মাসে রোপণ করলে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসের দিকে আদা উত্তোলন করা যাবে। তবে, গাছের পাতা হলুদ হয়ে শুকিয়ে গেলে ও গাছের ডাঁটা শুকাতে শুরু করলে আদা তোলা শুরু করতে হবে। আদা তুলে গায়ে লেগে থাকা মাটি পরিষ্কার করে ছায়াযুক্ত, শুষ্ক স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে । 

প্রতি বস্তায় ১-১.৫ কেজি বা আরও বেশি আদার ফলন হয়ে থাকে। 

আদার রোগ-বালাই ও সমাধান : 

আদায় রোগ-বালাই কম দেখা যায়, তবে কিছু রোগে আদার ফলন মারাত্মক ভাবে হ্রাস পায় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে‌ গাছ মারা যায়। আদার কিছু প্রধান সমস্যা – 

১. আদার ডগা বা কান্ড ছিদ্রকারী পোকা: 

ডিম থেকে বের হওয়া সদ্যজাত লার্ভা আদার গাছ ছিদ্র করে ভেতরে ডুকে এবং কান্ডের ভেতরের অংশ খেতে থাকে। পোকা কান্ড ছিদ্র করে ভিতরের দিকে খায় বলে পাতা হলুদ হয়ে যায়। আক্রান্ত কান্ডে ছিদ্র ও কীড়ার মল দেখা যায়। আর্দ্র আবহাওয়ায় এ পোকার আক্রমণ বেশি হয়।

আক্রমণের প্রথম অবস্থায় আক্রান্ত গাছ তুলে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। অত্যধিক আক্রমণ হলে তখন কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। ম্যালাথিয়ন, ক্লোরপাইরিপস গ্রুপের কীটনাশক প্রয়োগে এই পোকা দমন হয়। 

পরামর্শ – ভালো , রোগমুক্ত আদা বীজ হিসেবে ব্যবহার করা। এবং পিলাইতোলা থেকে বিরত থাকা।

২. রাইজম রট রোগ:

এ রোগ ছত্রাকের আক্রমণে হয়ে থাকে যা রাইজোমে আক্রমণ করে। প্রথমে পাতা হলুদ হয়ে যায় কিন্তু পাতায় কোন দাগের সৃষ্টি হয় না। পরবর্তীতে গাছ ঢলে পরে ও শুকিয়ে মরে যায়। রাইজম(আদা) পচে যায় ও ফলন মারাত্মক ভাবে হ্রাস যায়। আর্দ্র ও স্যাঁত স্যাঁতে আবহাওয়ায় এ রোগ বেশী দেখা যায়। বর্ষাকাল বা জলাবদ্ধতা থাকলে এ রোগের প্রকোপ আরও বেড়ে যায়।

প্রথম অবস্থায় আক্রান্ত গাছ সম্পূর্ণ রাইজোম সহ তুলে ফেলতে হবে। 

আক্রমণ বেশি হলে কপার অক্সিক্লোরাইড জাতীয় ছত্রাকনাশক গাছের গোড়ায় স্প্রে করে দিতে হবে। এছাড়া (মেটালেক্সিল +ম্যানকোজেব) জাতীয় মিক্স ছত্রাকনাশক স্প্রে করলেও ভালো কাজ হয় ।

পরামর্শ হলো – বীজ শোধন (উপরে বর্ণনা করা হয়েছে) করে বপন করা । পিলাইতোলা থেকে বিরত থাকা । 

This Post Has 2 Comments

  1. Wasiur

    Beautiful

Leave a Reply