হাফ ড্রাম বা স্থায়ী বেড তৈরি করে সবার পক্ষে ছাদে ফলের বাগান করা সম্ভব হয় না। এর বিকল্প হিসেবে ছোট সাইজের টবে কিভাবে বারোমাস ফল চাষ করবেন তা এখানে আলোচনা করা হয়েছে । এই পদ্ধতিতে ছোট সাইজ বলতে ১০ ইঞ্চি টব থেকে শুরু করে ৫০ লিটার আয়তনের টব প্রয়োজন হবে।
সূচীপত্র –
- উপযুক্ত টব নির্বাচন
- টবের ড্রেনেজ ব্যবস্থা
- টবের মাটি প্রস্তুত প্রণালী
- টবের মাটি শোধন করার উপায়
- ছাদে ফলের বাগান করার জন্য উপযুক্ত চারা গাছ বাছাই
- চারা গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়
- টবে ফলের চারা গাছ লাগানোর পদ্ধতি
- রোপণ বা স্থানান্তর পরবর্তী চারা গাছের পরিচর্যা
উপযুক্ত টব নির্বাচন :
বিভিন্ন উপকরণের টব ব্যবহার করা হয় ছাদ বাগান করার জন্য । তবে, গাছের ধরণ অনুযায়ী উপযোগী টব বাছাই করে নিতে হয় ।
ফল গাছ রোপণের ক্ষেত্রে টব নির্বাচনে ধারাবাহিকতা অবলম্বন করতে হয়। কারণ, চারা গাছ প্রথমেই ২০ লিটার টবে বা ৫০ লিটার পাত্রে রোপণ করা যাবে না। প্রথমে ৮-১০ ইঞ্চি টব বা সমআয়তনের পাত্রে রোপণ করে বাগানের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে । এই খাপ খাওয়ানোর সময়সীমা কয়েক মাস থেকে এক বছর হতে পারে, ( এ নিয়ে ‘টবে ফলের চারা গাছ লাগানোর পদ্ধতি’ অংশে ভিডিও সহ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে ) ।
অর্থাৎ, প্রথমে ছোট টবে গাছ রোপণ করে পরবর্তীতে গাছের বৃদ্ধি অনুযায়ী টব পরিবর্তন করতে হবে ।
বিভিন্ন উপকরণের টব গুলোর তুলনামূলক সংক্ষিপ্ত আলোচনা –
আপনার সামর্থ্য ও সুযোগের উপর নির্ভর করে টব বাছাই করবেন। কিন্তু সব রকম টবের কিছু সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে, এগুলো মাথায় রাখতে হবে।
মাটির টব –
• বেশি বড় সাইজ পাওয়া যায় না, ১৬-১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত বড় হয়ে থাকে
• দাম বেশি
• বাতাসে বা অন্য কোন কারণে টব উল্টে গেলে সহজে ভেঙে যায়
• দ্রুত মাটির পানি শুকিয়ে যায়
• মাটি সহজে রোদের তাপে গরম হয়ে যায়
সিমেন্টের টব-
• মাটির টবের চেয়ে বড় সাইজ পাওয়া যায়।
• ওজনে বেশ ভারি হয়ে থাকে। বহন করতে অসুবিধা
• উল্টে গেলে ভেঙে যাওয়ার চান্স থাকে
• শিকড়ের চাপে ভেঙে যায় অনেক সময়
প্লাস্টিকের টব –
বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে, এর মধ্যে টব,বালতি, ক্যারেট,ড্রাম এগুলো গাছ লাগানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।
• ওজনে হালকা হয়ে থাকে, বহন করতে সুবিধা
• মাটির পানি সহজে শুকায় না
• অনেক বড় সাইজের পাওয়া যায়
• উল্টে গেলে ভেঙে যায় না
• মাটি বা সিমেন্টের টবের তুলনায় দামে সস্তা
• ইচ্ছা মতো রং দিয়ে সাজানো যায়
জিও ব্যাগ –
কয়েক ইঞ্চি থেকে শুরু করে বিশাল হাফ ড্রাম সাইজের জিও ব্যাগ পাওয়া যায়।
• ৩০ গ্যালনের চেয়ে বড় জিও ব্যাগ মাটি সহ স্থানান্তর করা যায় না
• ব্যাগের গায়ে অনেক ছোট ছোট ছিদ্র থাকে, যা দিয়ে পানি,মাটির কণা বের হয় । এজন্য সহজেই জিও ব্যাগের গায়ে শেওলা পরে নোংরা হয়ে যায় ।
• মাটি ঠান্ডা রাখে যা গাছের জন্য উপকারী
ফলের ঝুড়ি বা ক্যারেট –
• আয়তাকার বিভিন্ন সাইজের হয়ে থাকে
• ছোট বড় অনেক ছিদ্র থাকে। এজন্য বস্তা,কাপড় বা পলিথিন দিয়ে ছিদ্র বন্ধ করতে হয় ।
• অন্য টবের মতো দৃষ্টিনন্দন হয় না
• দামে সস্তা, সহজে বহনযোগ্য
এগুলা ছাড়াও আরো অনেক রকমের টব/পাত্র মানুষ ব্যবহার করে থাকে ছাদে গাছ লাগানোর জন্য। তবে, সব দিক বিবেচনায় নিলে শক্ত প্লাস্টিকের তৈরি পাত্র গুলো ছাদে ফল গাছ রোপণের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
টবের ড্রেনেজ ব্যবস্থা:
সব রকম ফল গাছ দারানো পানি সহ্য করতে পারে না। তাই, টবের জল নিকাশি ব্যবস্থা ভালো ভাবে করতে হবে।
বিভিন্ন ভাবে টবের ড্রেনেজ সিস্টেম করা হয় । এর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা বর্ণনা করা হলো..
৮-১২ ইঞ্চি টব ও সমআয়তনের পাত্রের জন্য –
পাত্রের নিচে একটি বড় ছিদ্র থাকলেই হবে। আর এখানে কোকোকয়ার সবচেয়ে ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। এর জন্য পাত্রের নিচে একটি কোকোকয়ার এর লেয়ার/স্তর করে দিতে হবে।
তারপর তার উপর মাটি দিয়ে টব পূর্ণ করতে হবে ।
কোকোকয়ার ১.৫-২ বছর পর্যন্ত ড্রেনেজ হিসেবে ভালো কাজ করে । এই সময় পর টবের মাটি পরিবর্তন করে দেওয়ায় সময় ড্রেনেজ ব্যবস্থা নতুন করে করতে হবে।
১৪ ইঞ্চি টব থেকে ৫০ লিটার আয়তনের টবের জন্য –
পাত্রের নিচে একাধিক বড় ছিদ্র রাখতে হবে। এখানে ড্রেনেজ হিসেবে ঝামা ইট,কাঠ-কয়লার বড় টুকরা ও কোকোচিপস্ এর বড় টুকরা মিশিয়ে একটি লেয়ার তৈরি করে নিতে হবে পাত্রের নিচে। উপকরণ সব পাওয়া না গেলে শুধু সাধারণ ইটের টুকরা দিলেও হবে । এরপর মোটা লাল/সাদা বালির একটি স্তর তৈরি করে নিতে হবে। তারপর মাটি দিয়ে পাত্র পূর্ণ করে দিতে হবে।
টবের মাটি প্রস্তুত প্রণালী:
সাধারণত এক লিটার পাত্রে ১.২-১.৫ কেজি মাটি ধরে। সে অনুযায়ী আপনার টবের সাইজের হিসাব করে মাটি তৈরি করতে হবে। মাটির মিশ্রণ তৈরিতে একটি বা দুটি ছোট সাইজের পাত্র হিসাবের জন্য ব্যবহার করলে সুবিধা হয় । যেমন- আমি ৪ লিটারের রং কোটাকে হিসাবের পাত্র হিসেবে ব্যবহার করি।
ফল গাছের জন্য প্রচুর খাদ্য প্রয়োজন। আবার যদি ছোট টবে চাষ করা হয়, তাহলে মাটি থাকবে সীমিত । আর সীমিত মাটিতে স্বাভাবিক ভাবে খাদ্য উপাদানও সীমিত। তাই ছাদে ফলের বাগান করতে মাটি তৈরিতে বিশেষ নজর দিতে হবে।
মাটির মিশ্রণ –
গাছের পুষ্টি ও মাটির জলাবদ্ধতার দিকে বিশেষ নজর দিয়ে ফল গাছের জন্য মাটি তৈরি করতে হবে।
এর জন্য উপযুক্ত মিশ্রণ হতে পারে – ( এই তিনটি মিশ্রণ পদ্ধতির যেকোন একটি নিয়মে মাটি তৈরি করে নিতে হবে )
মিশ্রণ- ১: গোবর পঁচা সার ৩০% + নদীর লাল মোটা বালু ২০% + দোঃআঁশ মাটি ৪০% + কাঠ-কয়লার টুকরা ও ইটের ছোট টুকরা ১০%
মিশ্রণ- ২: গোবর পঁচা সার ৩০% + কোকোপিট ২০% + দোঃআঁশ মাটি ৪০% + কাঠ-কয়লার টুকরা ও ইটের ছোট টুকরা ১০%
মিশ্রণ- ৩: ভার্মি কম্পোস্ট বা পাতা পচাঁ সার ২০-৩০% + নদীর লাল মোটা বালু বা কোকোপিট ২০% + দোঃআঁশ মাটি ৪০% + কাঠ-কয়লার টুকরা ও ইটের ছোট টুকরা ১০%
এভাবে মিশ্রণ তৈরির পর মাটি শোধন করে নিতে পারেন সহজ একটি পদ্ধতিতে । কারণ, শোধিত মাটিতে রোগ-জীবাণু কম থাকে। শোধন করার পর ছাদ বাগানের গাছের জন্য মাটির খাদ্য গুণ নিশ্চিত করতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে পারেন।
টবের মাটি শোধন করার উপায় :
মাটি তৈরির সময় অথবা পুরাতন মাটি পুনঃব্যবহার করতে গেলে মাটি শোধন করার প্রয়োজন পরে । এতে মাটি বাহিত রোগ থেকে ছাদ বাগানের গাছকে মুক্ত রাখা যায়।
মাটি শোধনের একটি পদ্ধতি হলো রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার । এর জন্য দরকার ছত্রাকনাশক পাউডার।
প্রতি ৮ লিটার অর্থাৎ-১০-১২ কেজি মাটির মিশ্রণে এক চা চামচ কার্বন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে । এতে মাটি শোধন হয়ে যাবে।
টবের মাটির মিশ্রণে রাসায়নিক সার ব্যবহার:
মাটির মিশ্রণ তৈরিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা যায় । সার মেশানোর ১২-১৫ দিন পর চারা গাছ রোপণ করতে হয়।
রাসায়নিক সার এর হিসাব –
প্রত্যেক ৫ লিটার পাত্রের সমান মাটিতে ১ চা চামচ ডিএপি (DAP) বা টিএসপি সার + ১ চা চামচ এমওপি (MOP) সার + হাফ চা চামচ জিপসাম মেশাতে হবে । অর্থাৎ – ১০০ কেজি মাটির জন্য ৪০-৫০ গ্রাম টিএসপি বা ডিএপি + ৩০-৪০ গ্রাম এমওপি সার + ২০-৩০ গ্রাম জিপসাম সার মেশাতে হবে।
ছাদে ফলের বাগান করার জন্য উপযুক্ত চারা গাছ বাছাই :
যেহেতু ছোট টবে ফল চাষ তাই চারা নির্বাচন দেখেশুনে করতে হবে। কারণ ছোট টবের গাছ গুলো বিশেষ পরিচর্যায় খাটো কিন্তু অধিক ঝোপালো করে রাখতে হবে। ঝোপ সহ গাছের সবোর্চ্চ উচ্চতা হবে ৭-৮ ফুট । এজন্য গাছের কোন লম্বা ডালা-পালা রাখা যাবে না।
যেসব বিষয় গুলো খেয়াল রাখতে হবে –
• কোনো অবস্থায় লম্বা ডালা-পালা যুক্ত চারা ক্রয় করা যাবে না
• সব সময় উচ্চ ফলনশীল, হাইব্রিড জাতের চারা বাছাই করতে হবে
• কলমের ফুল-ফল ধরা এমন চারা ক্রয় করতে হবে
• যে জাত গুলো ছাদে ভালো ফলন দিচ্ছে সেগুলো বাছাই করতে হবে
• খাটো জাত, ড্রোয়ার্প জাত গুলো নির্বাচন করতে হবে
• বিশাল দেহের ফল গাছ গুলো রোপণ থেকে বিরত থাকতে হবে, যেমন- খেজুর,কলা,নারিকেল, কাঁঠাল ইত্যাদি । এগুলো ছোট টবে করা যাবে না।
• মোটামুটি সারা বছর ফল দেয় এমন জাত গুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে
• প্রথমেই বিশাল সাইজের চারা না কিনে ২-৩ ফুটের ছোট চারা কিনে তা যত্ন করে বড় করে তুলতে হবে
• ১-২ টি ডালের লম্বা চারা বাছাই করা যাবে না। অধিক শাখা যুক্ত খাটো চারা ক্রয় করতে হবে। বা লম্বা চারা ক্রয় করার পর চারার মাথা কেটে দিয়ে অধিক শাখা সৃষ্টি করতে হবে
চারা গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় :
ছাদ বাগানে গাছ রোপণ বছরের যেকোনো সময় করা যায় । তবে, জুন মাস থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত চারা রোপণের উত্তম সময়। কারণ আবহাওয়া গত কারণে এই সময়টাই গাছের কোষ-কলা সবোর্চ্চ সক্রিয় অবস্থায় থাকে, আবার এই সময়ে অধিক বৃষ্টিপাত হয় । যার ফলে ট্রান্সফার শক অবস্থা গাছ দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারে এবং দ্রুত নতুন ডাল-পাতা ছাড়তে শুরু করে।
শীতের সময় বেশির ভাগ গাছ সুপ্ত অবস্থায় থাকে, তেমন বৃদ্ধি পায় না। তাই শীতকালে চারা গাছ রোপণ করলে নতুন শিকড়, ডাল-পালা করতে অনেক সময় লেগে যায়।
টবে ফলের চারা গাছ লাগানোর পদ্ধতি :
উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিতে আগে থেকে সার মেশানো মাটি দ্বারা চারা গাছ রোপণ করতে হবে। ছাদ বাগানে চারা গাছ রোপণে বেশিরভাগ মানুষ একটি ভুল করে থাকে। তা হলো – চারা গাছ আনার পর সরাসরি হাফ ড্রামে বা বড় পাত্রে রোপণ করে দেয় । এটা একটা মারাত্মক ভুল, এতে যেমন চারা গাছের ক্ষতি হয় তেমনি সার-মাটিরও অপচয় হয় ।
এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ভিডিও চিত্র টি দেখে নিন
চারা গাছের কিভাবে ক্ষতি হয় –
মাটি ভর্তি হাফ ড্রাম বা বড় পাত্র গুলো ফাইনাল জায়গায় সেট করা থাকে । অর্থাৎ সেই জায়গায় অধিক রোদ-তাপ থাকে। আর এই অবস্থায় যদি চারা গাছ সেখানে রোপণ করে দেওয়া হয় তাহলে অনেক ক্ষেত্রে ট্রান্সফার শক ও বাগানের নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে না পেরে গাছ একদম র্নিজীব এর মতো হয়ে যায়, গাছের বৃদ্ধি দীর্ঘ দিনের জন্য থেমে যায় ।
সার-মাটির কিভাবে অপচয় হয় –
প্রথম অবস্থায় চারা গাছের অবয়ব যেমন থাকে ছোট তেমনি তার খাদ্য চাহিদাও থাকে সীমিত । আবার ছোট চারার শিকড় বেশি বিস্তৃত থাকে না। এজন্য ছোট চারা যদি প্রথমেই বড় পাত্রে রোপণ করে দেওয়া হয় তাহলে মাটিতে মেশানো বেশিরভাগ সার উপাদান কাজে লাগে না তথা গাছ টেনে নেয় না। ফলে মাটির খাদ্য গুণাগুণ ধীরে ধীরে নিঃশেষ হতে থাকে গাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার না হয়েই।
এই দুই সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে যে কাজটি করতে হবে তা হলো ধারাবাহিক ভাবে টব পরিবর্তন করে গাছ রোপণ করতে হবে।
চারা গাছ রোপণে ধারাবাহিকতা-
প্রথমে চারা গাছ ১০ ইঞ্চি টবে বা সমআয়তনের পাত্রে রোপণ করতে হবে । এই অবস্থায় গাছটি ৪-৬ মাস থাকবে, কোন কোন গাছের ক্ষেত্রে তেমন বৃদ্ধি না হলে আরও বেশি সময় রাখা যাবে । গাছে যখন ব্যাপক হারে নতুন ডাল-পালা ছাড়তে শুরু করবে তখন দ্বিতীয় ধাপে স্থানান্তর করে দিতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপে গাছকে স্থানান্তর করতে হবে ১৮-২০ লিটার টবে । এই অবস্থায় গাছে প্রথমবার ফুল/মুকুল আসলে ভেঙে দিতে হবে। এখানে গাছটি ২-২.৫ বছর থাকবে বা গাছের তেমন বৃদ্ধি না হলে আরও অধিক সময় রাখা যাবে । এরপর তৃতীয় ধাপে স্থানান্তর করতে হবে ।
তৃতীয় ধাপে গাছকে ৪০-৫০ লিটার আয়তনের পাত্রে স্থানান্তর করে দিতে হবে । এই অবস্থায় গাছকে স্থায়ী ভাবে রাখা যাবে বা সামর্থ্য/ব্যবস্থা থাকলে ১০০ লিটারের হাফ ড্রাম বা স্থায়ী বেডে পরবর্তীতে ২-৩ বছর পর স্থানান্তর করে দিতে হবে।
ছোট টবে ছাদে ফলের বাগান করার ক্ষেত্রে সবোর্চ্চ টব হলো ৫০ লিটারের অর্থাৎ তৃতীয় ধাপে স্থানান্তর হলো সবোর্চ্চ স্তর ।
৫০ লিটার টবে গাছকে স্থায়ী ভাবে রাখতে চাইলে যা করতে হবে –
• প্রতি ২ বছর পর পর টবের চারপাশের মাটি যতটুকু সম্ভব গর্ত করে তুলে ফেলে দিতে হবে এবং পুনরায় নতুন সার-মাটি দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে
• গাছের লম্বা ডালা-পালা নিয়মিত ছাঁটাই করে দিতে হবে। অধিক ঝোপালো করা যাবে না গাছকে।
• গাছে অধিক ফুল-ফল রাখা যাবে না, ছাঁটাই করে দিতে হবে
• প্রয়োজন মতো বছরে এক-দুই বার প্রুনিং করে দিতে হবে
রোপণ বা স্থানান্তর পরবর্তী চারা গাছের পরিচর্যা :
আবহাওয়া ঠান্ডা দেখে ও কিছু দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত হবে বা হচ্ছে এমন অবস্থায় গাছ রোপণ করতে হবে। রোপণ করার পর প্রথম কিছু দিন বিশেষ যত্ন নিতে হবে, তা হলো –
• ট্রান্সফার শক জনিত গাছ নেতিয়ে যেতে পারে । এজন্য স্থানান্তর করার পর গাছকে ৭-১৫ দিন ছায়া যুক্ত স্থানে রাখতে হবে। অথবা টব স্থায়ী জায়গায় থাকলে গাছের উপর পলিথিন কভার/চাদর দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
• আবহাওয়া অধিক গরম থাকলে গাছে দিনে ৩-৪ বার পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।
• রোপণের ২-৩ দিন পর ছত্রাকনাশক স্প্রে করা যেতে পারে। কারণ ট্রান্সফার শক জনিত গাছ দুর্বল থাকায় তখন গাছে সহজে ছত্রাক সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।
অনেক সময় রোপণ করার পর গাছে খুঁটি প্রদান করার দরকার পরে । এই খুঁটি দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে ।
খুঁটি দেওয়ার নিয়মাবলী –
খুঁটি সীমিত সময়ের জন্য গাছকে দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করে, তাই এমন ভাবে খুঁটি স্থাপন করা যাবে না যে গাছ খুঁটির উপর নির্ভরশীল হয়ে পরে । ভুল ভাবে খুঁটি স্থাপনে গাছ দুর্বল হয়ে পরে।
• খুঁটি সবসময় গাছ এর চেয়ে ছোট-খাটো বাছাই করতে হবে । কারণ- বড় খুঁটি দিলে গাছ খুঁটির উপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পরবে । গাছের উচ্চতার অর্ধেক সমান হবে খুঁটির উচ্চতা বা এর চেয়েও কম ।
• খুঁটির সাথে গাছ সবসময় ডিলে ভাবে বাঁধতে হবে , কোন সময়ই আঁটোসাঁটো করে একদম খুঁটির সাথে লাগিয়ে বাঁধা যাবে না । এর ফলে গাছ বাতাসে নিয়মিত দোল খাবে , এতে গাছ এর গোঁড়া থেকে বড় বড় শিকড় বের হবে।
• বাঁধার কাজে সবসময় হালকা প্রাস্টিক জাতীয় বা পাটের সুতা ব্যবহার করতে হবে , ধাতব কিছু দিয়ে বাঁধা যাবে না । ধাতব কিছু গাছ এর গায়ে ক্ষতের সৃষ্টি করে এবং অনেক সময় গাছ কেটে কান্ডে ডুকে যায় ।
পরিশেষে – উপরোক্ত আলোচনা থেকে ছাদে ফলের বাগান করার একটি সঠিক ধারণা পাওয়া সম্ভব। বিশেষ করে শুরুতে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো একজনের জানা প্রয়োজন তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা আছে । আশা করি এর মাধ্যমে আপনারা উপকৃত হবেন।
