বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল ভাবে ইপসম সল্ট এর ব্যবহার উপস্থাপন করা হচ্ছে এতে করে অনেক বাগানীর প্রিয় গাছ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে , এর সাথে অর্থ ও শ্রম অপচয় হচ্ছে । গাছের যত্নে এর ব্যবহার অতি সীমিত , এমনকি ব্যবহার না করলেও আপনার বাগান ঠিক থাকবে । এখানে প্রচলিত ব্যবহার গুলো কতটা যুক্তিসঙ্গত তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে ।
সূচিপত্র –
- ইপসম সল্ট/লবণ কি?
- ইপসম সল্ট কি কোন রাসায়নিক সার?
- ইপসম সল্ট এর কাজ
- ম্যাগনেসিয়াম ও সালফার এর অভাব জনিত লক্ষণ
- ইপসম সল্ট এর প্রচলিত ব্যবহার গুলো ও তার সত্যতা নির্ণয়
1. বীজ এর অঙ্কুরোদগমে সাহায্য করে
2. গাছ এর ট্রান্সফার শক (transplant shock)
দূর করে
3. গাছের পাতা সবুজ করে ও কান্ড, ডাল-পালা
বৃদ্ধি করে
4. পোকা-মাকড় দূর করে
5. কিছু রোগ থেকে মুক্তি দেয়
6. মরিচ,টমেটো,গোলাপ এর ফুল-ফল বৃদ্ধি করে
7. অধিক গোলাপ ফুল উৎপাদন করে
8. টমেটোর মিষ্টতা বৃদ্ধি ও মরিচের ঝাল বৃদ্ধি
করে
9. ইনডোর প্লান্ট এ ইপসম সল্ট ব্যবহার
10. টমেটোর ব্লোজম ইন্ড রট(Blossom End
Rot) রোগ দমন করে
ইপসম সল্ট ব্যবহার করা উচিত না অনুচিত?
ইপসম সল্ট/লবণ কি ?(What is Epsom Salt ?):
ম্যাগনেসিয়াম সালফেট কে ইপসম সল্ট বলা হয় এবং এই নামেই বহুল পরিচিত । এটি মানব স্বাস্থ্যের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয় । তবে, এর পাশাপাশি উদ্ভিদের ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার রয়েছে । ইপসম সল্টে ১০% ম্যাগনেসিয়াম ও ১৩% সালফার রয়েছে । এজন্য উদ্ভিদের ম্যাগনেসিয়াম ও সালফার এর অভাব পূরণে এটি ব্যবহার করা হয় ।
ইপসম সল্ট কি কোন রাসায়নিক সার ?(Does Epsom salt is a fertilizer? ) :
সবার ধারণা ইপসম সল্ট একটি রাসায়নিক সার। কিন্তু, এটি কোন রাসায়নিক সার নয় , এতে ম্যাগনেসিয়াম ও সালফার রয়েছে । উদ্ভিদের অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদানের মধ্যে রয়েছে এই ম্যাগনেসিয়াম ও সালফার । তাই , উদ্ভিদের পুষ্টি চাহিদা পূরণে এর ব্যবহার করা হয় যা সারের মতো কাজ করে । ইপসম সল্ট কে প্রধান খাদ্য উপাদান বা সার হিসেবে ব্যবহার করা হয় না বরং অণুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয় । ম্যাগনেসিয়াম ও সালফার এর অভাব জনিত সমস্যা সমাধানে ও এই দুটি খাদ্য উপাদানের চাহিদা পূরণে এটি ব্যবহার করা হয়।
ইপসম সল্ট এর কাজ :
গাছের শিকড় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, পাতা কুঁকড়ে যাওয়া রোধ করে । পাতায় ক্লোরোফিল এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ম্যাগনেসিয়াম যা ক্লোরোফিলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে পাতাকে গাঁঢ় সবুজ করে তুলে । এছাড়াও উদ্ভিদের গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান নাইট্রোজেন ও ফসফরাস এর শোষণ মাত্রা বৃদ্ধি করে । কান্ড-পাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করে গাছকে ঝোপালো আকার দেয় ।
ম্যাগনেসিয়াম ও সালফার এর অভাব জনিত লক্ষণ:
অভাব জনিত লক্ষণ দেখে নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয় যে এটা ম্যাগনেসিয়াম বা সালফার এর কারণে হয়েছে । তারপরও ধারণা করা যায়- সালফার এর অভাবে গাছের সমস্ত পাতা হলুদ বর্ণের হয়ে যায় । অপুষ্ট পাতা প্রথমে বির্বণ সবুজ পরে হলুদাভ সবুজ এবং পরবর্তীতে পুরোপুরি হলুদ বর্ণের হয়ে যায় । উপরের কচি পাতাতে প্রথমে এই লক্ষণ দেখা যায় । কান্ডের রং লাল হয়ে যায় । কান্ড সরু হয়ে গাছের উচ্চতা বৃদ্ধি ক্রমাগত হ্রাস পায় ।
আর ম্যাগনেসিয়াম এর অভাবে গাছের নিচের দিকের পাতাগুলো শিরা ব্যতিত বাকি অংশ হলুদ হয়ে যায় । পাতা তাড়াতাড়ি মরে যায় , অকালে ঝরে পরে । শিকড় এর বৃদ্ধি সীমিত হয়ে যাওয়ায় গাছ জীবনীশক্তি বিহীন ঝিমিয়ে পরার মতো অবস্থা হয় ।
ইপসম সল্ট এর প্রচলিত কিছু ব্যবহার ও বাস্তবতা:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন – ফেসবুক, ইউটিউবে এর নানাবিধ ব্যবহার দেখানো হয় । ইপসম সল্ট কে অনেকে বাগানের জন্য অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে থাকেন । কিন্তু প্রচলিত এসব ব্যবহারের বেশিরভাগই বিশ্বাস এর উপর ভিত্তি করে হয়েছে , বৈজ্ঞানিক ভাবে এসব বেশিরভাগ ব্যবহারেরই ভিত্তি নেই ।
১. বীজ এর অঙ্কুরোদগমে সাহায্য করে :
প্রচলিত বিশ্বাস – বীজ বুনার পর ইপসম সল্ট মিশ্রিত পানি বা এমনিতে মাটিতে ছিটিয়ে দিলে বীজ এর অঙ্কুরোদগম দ্রুত হয় এবং অধিক বীজ জার্মিনেশন হয় ।
বাস্তবতা : বীজ জার্মিনেশনের জন্য বাইরে থেকে কোন পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করার প্রয়োজন পরে না । বীজ এর মধ্যেই প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান সঞ্চিত থাকে যা বীজ জার্মিনেশনে কাজে লাগে ।
আবার সঠিক আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা প্রদান করতে পারলে বীজ জার্মিনেশন সবোর্চ্চ হয় ।
বীজ জার্মিনেশন হওয়ার পর ছোট চারার জন্য পুষ্টি সরবরাহ করার জন্যও ইপসম সল্ট প্রয়োগ এর প্রয়োজন নেই । ভালো মানের বীজ উৎপাদন মাটি (seed starting mix) ব্যবহার করলেই হয়ে যাবে , এতে চারার জন্য সকল প্রকার খাদ্য উপাদান থাকে ।
অর্থাৎ, বীজ এর জার্মিনেশনে ইপসম লবণ প্রয়োগ এর কোন প্রয়োজন নেই ।
২. গাছ এর ট্রান্সফার শক (transplant shock) দূর করে :
প্রচলিত বিশ্বাস – গাছ এক পাত্র থেকে আরেক পাত্রে রোপণ করলে , চারা উৎপাদন ট্রে থেকে মূল জমিতে রোপন করলে , এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পরিবহনের সময় গাছের অনেক শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত হয় এতে গাছ একরকম ঝিমিয়ে যাওয়ার মতো হয় যাকে ট্রান্সপ্লান্ট শক বলা হয় । বেশি শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই ট্রান্সপ্লান্ট শক এর দরুণ গাছ মারাও যেতে পারে । ইপসম সল্ট প্রয়োগ করলে এই ট্রান্সপ্লান্ট শক দূর হয় এবং গাছ দ্রুত তাজা হয়ে উঠে ।
বাস্তবতা: চারা উৎপাদনের সময় বীজতলার মাটিতে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ সালফার না থাকে তাহলে মূল জমিতে লাগানোর সময় চারা মৃত্যুর হার বেশি হয় ।
তাই, চারা ট্রান্সপ্লান্ট এর আগে বীজতলার মাটিতে সালফার এর ঘাটতি থাকলে, সালফার প্রয়োগ করতে হবে।
চারা রোপণ এর পর ফসফরাস জাতীয় সার নতুন শিকড় গজাতে সাহায্য করে এবং কিছু হরমোন শিকড় এর পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে যার ফলে গাছ দ্রুত ট্রান্সপ্লান্ট শক থেকে বের হয়ে আসতে পারে । আবার কিছু পরীক্ষায় দেখা গেছে যে , কিছু গ্রুল্ম জাতীয় গাছ এর ক্ষেত্রে ট্রান্সপ্লান্ট করার পর চিনির পানি প্রয়োগ করলে চারা দ্রুত সতেজ হয়ে ওঠে । এক্ষেত্রে ৭০ গ্রামের মতো চিনি ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে চারা রোপণ এর পর প্রথম বার প্রয়োগ করতে হবে ।
অর্থাৎ, গাছ এর ট্রান্সফার শক (transplant shock) দূর করতে ইপসম লবণ এর কোন কার্যকরী ভূমিকা নেই ।
৩. গাছের পাতা সবুজ করে ও কান্ড, ডাল-পালা বৃদ্ধি করে:
প্রচলিত বিশ্বাস – ইপসম লবণে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম যা পাতার ক্লোরোফিল তৈরিতে ভূমিকা রাখে । এছাড়াও ম্যাগনেসিয়াম উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান নাইট্রোজেন ও ফসফরাস এর শোষণ মাত্রা বৃদ্ধি করে ।
বাস্তবতা: ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরোফিল তৈরি করে পাতাকে সবুজ করে তুলে এছাড়াও নাইট্রোজেন এর শোষণ মাত্রা বৃদ্ধি করে এতেও পাতা সবুজ হয় , পাতার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, ফলে অধিক সালোকসংশ্লেষণ এর দরুন গাছের ডাল-পালা বৃদ্ধি পেয়ে গাছ অধিক ঝোপালো হয় ।
কিন্তু, মাটিতে যদি অধিক পরিমাণে ফসফরাস থাকে তাহলে গাছ এর ম্যাগনেসিয়াম শোষণ বাধাগ্রস্ত হয় , অর্থাৎ পর্যাপ্ত ম্যাগনেসিয়াম মাটিতে থাকা সত্ত্বেও গাছ শোষণ করতে পারে না । এতে পাতা হলুদ হয়ে পরে এই অবস্থায় যদি ইপসম সল্ট প্রয়োগ করা হয় তাহলে কোন কাজ হবে না ।
তাই, ইপসম সল্ট প্রয়োগ এর আগে মাটি পরীক্ষা জরুরি যে, আসলেই মাটিতে ম্যাগনেসিয়াম ঘাটতি রয়েছে কিনা ।
৪. পোকা-মাকড় দূর করে :
প্রচলিত বিশ্বাস – ইপসম লবণ পানিতে মিশিয়ে গাছে দিলে বা গাছের গোড়ায় ছিটিয়ে দিলে পোকা-মাকড় দূর হয় ।
বাস্তবতা: ইপসম সল্ট প্রয়োগে পোকা-মাকড় দমন হয় এটার পরীক্ষিত কোন প্রমাণ নেই ।
৫. কিছু রোগ থেকে মুক্তি দেয় :
প্রচলিত বিশ্বাস – ইপসম লবণ প্রয়োগ করলে কিছু রোগ থেকে উদ্ভিদ কে মুক্তি দেয় ।
বাস্তবতা: ইপসম সল্ট প্রয়োগে রোগ দমন হয় এটার পরীক্ষিত কোন প্রমাণ নেই ।
৬. মরিচ, টমেটো, গোলাপ এর ফুল-ফল বৃদ্ধি করে:
প্রচলিত বিশ্বাস – এ জাতীয় গাছ গুলো মাটি থেকে অধিক পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম শোষণ করে । তাই, ইপসম লবণ প্রয়োগ করলে মরিচ, টমেটোর ফলন বৃদ্ধি পায় এবং গোলাপের ফুল বৃদ্ধি পায় ।
বাস্তবতা: মরিচ, টমেটো, গোলাপ গাছ ম্যাগনেসিয়াম অধিক গ্রহণ করে । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাটিতে জৈব পদার্থ পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকলে ম্যাগনেসিয়াম সহ অন্যান্য অণুখাদ্যের কোন ঘাটতি থাকে না ।
ইপসম সল্ট প্রয়োগে মরিচ, টমেটো, গোলাপ গাছের বৃদ্ধি হবে যদি মাটিতে ম্যাগনেসিয়াম এর ঘাটতি থাকে । তাই, আগে মাটি পরীক্ষা করা দরকার যে আসলেই মাটিতে ম্যাগনেসিয়াম এর ঘাটতি রয়েছে কিনা ।
অর্থাৎ, এমন বিশ্বাস সঠিক নয় যে ইপসম সল্ট প্রয়োগ করলেই আপনার মরিচ, টমেটো, গোলাপ এর ফলন বৃদ্ধি পাবে । এর প্রয়োগে ফলন বৃদ্ধি পাবে একমাত্র কারণে যদি আপনার বাগানের মাটিতে ম্যাগনেসিয়াম এর ঘাটতি থাকে ।
৭. অধিক গোলাপ ফুল উৎপাদন করে:
প্রচলিত বিশ্বাস – ইপসম সল্ট প্রয়োগে গোলাপ ফুল অধিক পরিমাণে হয় , অধিক বড় আকারের ফুল পাওয়া যায় ।
বাস্তবতা: ইপসম লবণ প্রয়োগে গোলাপের ফুল এর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এরকম কোন পরিক্ষীত প্রমাণ নেই । বরং গোলাপে ফুল এর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় গোলাপের জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি এনপিকে( NPK ) জাতীয় মিশ্র সার ব্যবহারে । এই এনপিকে মিশ্র সারে ইপসম সল্টও কিছু পরিমাণে থাকে । তবে এর মানে এই নয় যে, গোলাপের জন্য একমাত্র সার ইপসম সল্ট ।
অর্থাৎ, শুধুমাত্র ইপসম লবণ প্রয়োগে গোলাপের কুড়ি বৃদ্ধি, ফুল বড় হয় এমন বিশ্বাস সঠিক নয় ।
৮. টমেটোর মিষ্টতা বৃদ্ধি ও মরিচের ঝাল বৃদ্ধি করে:
প্রচলিত বিশ্বাস – ইপসম সল্ট প্রয়োগে টমেটোর স্বাদ বৃদ্ধি পায় এবং মরিচের ঝাল বৃদ্ধি পায়। এজন্য অন্যান্য গাছের তুলনায় মরিচ ও টমেটোতে বেশি পরিমাণে ব্যবহার করতে হয় ।
বাস্তবতা: ইপসম সল্ট প্রয়োগে মরিচ, টমেটোর স্বাদ বৃদ্ধি, গন্ধ বৃদ্ধি হয় এমন কোন পরিক্ষীত প্রমাণ নেই । বরং মরিচ, টমেটোর ফলন বৃদ্ধি হয়, আকারে বড় হয় , এবং স্বাদ বৃদ্ধি পায় সঠিক মাত্রায় নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম সার প্রয়োগে এবং নিয়ম মাফিক পানি সেচ ব্যবস্থাপনা করতে পারলে ।
অর্থাৎ, মরিচের ঝাল বৃদ্ধি ও টমেটোর স্বাদ বৃদ্ধির জন্য ইপসম লবণ কোন কার্যকরী ভূমিকা রাখে না ।
৯. ইনডোর প্লান্ট এ ইপসম সল্ট ব্যবহার :
প্রচলিত বিশ্বাস – ইপসম সল্ট ইনডোর প্লান্ট এর জন্য দারুন কার্যকরী সার ।
বাস্তবতা: ইনডোর প্লান্ট এ শুধুমাত্র ইপসম লবণ ব্যবহারে গাছ ভালো থাকবে না ।
ইনডোর প্লান্টে প্রয়োগ করা দরকার এনপিকে+মাইক্রোনিয়ট্রিয়েন্ট যুক্ত স্ল রিলিজ সার ।
এছাড়াও সবচেয়ে ভালো হবে যদি প্রত্যেক ১-২ মাস পর পর এক মুঠো করে ভালো মানের জৈব সার ইনডোর প্লান্ট এর গোড়ার মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া যায় ।
১০.টমেটোর ব্লোজম ইন্ড রট(Blossom End Rot) রোগ দমন করে:
প্রচলিত বিশ্বাস – ইপসম সল্ট প্রয়োগে টমেটোর ব্লোজম ইন্ড রট রোগ ভালো হয় ।
বাস্তবতা: টমেটোর ব্লোজম ইন্ড রট রোগ গাছে ক্যালসিয়ামের অভাবে হয় । এর মানে এই নয় যে মাটিতে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি রয়েছে । মাটিতে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম থাকার পরও গাছ গ্রহণ করতে পারে না একারণেও ব্লোজম ইন্ড রট রোগ হতে পারে ।
ইপসম লবণ ব্লোজম ইন্ড রট রোগ দমন করতে পারে না বরং ম্যাগনেসিয়াম বা পটাসিয়াম জাতীয় সার অতিরিক্ত ব্যবহার করলে গাছের ক্যালসিয়াম গ্রহণ ক্ষমতা হ্রাস পায় এর ফলে ব্লোজম ইন্ড রট রোগ হয়।
অর্থাৎ, ইপসম সল্ট টমেটোর ব্লোজম ইন্ড রট রোগ দমন করতে পারে না । উল্টো ম্যাগনেসিয়াম অতিরিক্ত ব্যবহার করলে ক্যালসিয়াম শোষণ মাত্রা কমিয়ে দিয়ে টমোটোতে ব্লোজম ইন্ড রট রোগ সৃষ্টি করতে পারে ।
ইপসম সল্ট ব্যবহার করা উচিত না অনুচিত?(Does you should apply Epsom salt?) :
উত্তর: ম্যাগনেসিয়াম একটি অণুখাদ্য , গাছের দ্বারা এর শোষণ মাত্রা অনেক কম । সাধারণত মাটিতে ম্যাগনেসিয়াম এর ঘাটতি থাকে না , অল্প পরিমাণ থাকলেও সেটা গাছের জন্য যথেষ্ট। আর জৈব সার নিয়মিত ব্যবহার করলে ইপসম লবণ প্রয়োগের এর কোন প্রয়োজন নেই।
যদি আপনার বাগানের মাটিতে ম্যাগনেসিয়াম এর ঘাটতি থাকে তাহলেই কেবল ইপসম লবণ ব্যবহার করা উচিত। এর জন্য মাটি পরীক্ষা করে দেখতে হবে আপনার বাগানের মাটিতে ম্যাগনেসিয়াম এর ঘাটতি রয়েছে কিনা । আর সালফার এর ঘাটতি থাকলে ইপসম লবণ ব্যবহার না করে সালফার জাতীয় রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে ।
যদি , মাটি পরীক্ষা করা সম্ভব না হয় তাহলে অভাব জনিত লক্ষণ ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে ইপসম লবণ ব্যবহার করতে হবে ।
তবে, মনে রাখতে হবে ম্যাগনেসিয়াম এর অভাব জনিত লক্ষণ মানে এই না যে মাটিতে ম্যাগনেসিয়াম এর ঘাটতি রয়েছে। অতিরিক্ত ফসফরাস সার প্রয়োগ করলেও গাছ চাহিদা মতো ম্যাগনেসিয়াম শোষণ করতে পারে না । তাই , অতিরিক্ত ফসফরাস প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে ।
সতর্কতা:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভুল প্রচারের ফলে বর্তমানে ইপসম সল্ট এর ব্যবহার অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে । এই অতিরিক্ত লবণ অর্থাৎ ম্যাগনেসিয়াম পরিবেশের জন্য মোটেও ভালো নয় । ইপসম লবণ পানিতে অধিক দ্রবণীয় এতে অতিরিক্ত ম্যাগনেসিয়াম মাটি থেকে পানির সাথে মিশে আশেপাশের জলাশয়ে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । এতে মাটি দূষণ এর পাশাপাশি পানি দূষণও ঘটাতে পারে ।
তাই, শুধু ইপসম সল্ট না সব ধরনের রাসায়নিক সার অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে বিরত থাকব আমরা ।
