বেগুন সবার পরিচিত একটি সবজি যা আলুর পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চাষাবাদ হয় আমাদের দেশে। অনেকে শখ করে পরিবারের চাহিদা মেটাতে ছাদে/বারান্দায় টবে বেগুন চাষ করে থাকেন । এছাড়াও বেগুনি , পার্পেল , সাদা ইত্যাদি আকর্ষণীয় রং এর বেগুন বাগানের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করে ।
সূচিপত্র –
- বেগুন এর জাত পরিচিতি
- বেগুন চাষ এর সময়
- বেগুন চাষ এর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ (রোদ-আলো)
- বেগুন এর চারা তৈরি
- টব/পাত্র নির্বাচন
- মাটি প্রস্তুত প্রণালী
- গাছ রোপণ পরবর্তী সার ব্যবস্থাপনা
- বেগুন উত্তোলন/হার্ভেস্ট
- বেগুন এর রোগ-বালাই ও সমাধান
বেগুন এর জাত পরিচিতি:
বর্তমানে বেগুনের অনেক উন্নত জাত – হাইব্রিড,বারোমাসী,রোগ প্রতিরোধী ইত্যাদি সৃষ্টি করা হয়েছে। কিছু জাত মৌসুমী ৬-৮ মাস স্থায়ী হয় , কিছু জাত আবার ১০-১৪ মাস পর্যন্ত একটানা ফলন দেয় আবার স্থায়ী গাছ হিসেবে বসত বাড়ির আঙিনায় ৩-৫ বছরও টিকে থাকে যেমন- সাদা গোল বা সাদা লম্বা বেগুন।
আকর্ষণীয় আকারের যেমন – টমেটোর মতো গোল বেগুন, ডিম সাইজের সাদা ডিম বেগুন (Baby white eggplant) , আঙুলের মতো সাইজের ছোট বেগুন (Little Finger Eggplant) রয়েছে ।
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি চাষ করা হয় যে জাত গুলো – শিংনাথ,ইসলামপুরী, তারাপুরী(হাইব্রিড), শুকতারা (হাইব্রিড) ,বারি বেগুন -৬-১০ পর্যন্ত, বারি বিটি বেগুন- ১-৪ পর্যন্ত । বিটি(BT)- Bacillus thuringensis (বেসিলাস থুরেনজেনসিস) , বিটি বেগুন ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকা প্রতিরোধী জাত।
ছাদে চাষের জন্য দীর্ঘ কালীন ফলন দেয় আর বারোমাস চাষ উপযোগী এমন জাত বাছাই করতে হবে। আর বারান্দায় বেগুন চাষ করলে ছোট আকৃতির গাছ হয় , গাছ লম্বায় কম কিন্তু অনেক ঝোপালো হয় এমন জাত বাছাই করতে হবে ।
তাই , বীজ ক্রয় বা চারা সংগ্রহের সময় জেনে নিবেন কোন জাত আর জাতের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি।
বেগুন চাষের সময় :
বর্তমানে সারা বছর চাষ করা যায় এমন অনেক জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে । তবে বেগুন এর সবচেয়ে ভালো ফলন হয় শীত মৌসুমে । শীতে চাষ করার জন্য আগস্ট-অক্টোবর মাস আর গ্রীষ্মকালীন চাষের জন্য জানুয়ারি – এপ্রিল মাস বীজ বপনের সময় । তবে শীতে চাষ করার জন্য অক্টোবরের মধ্যেই চারা রোপণ সম্পন্ন করতে হবে। আর ,শীত ব্যতিত অন্য সময়ে বেগুন করতে চাইলে বারোমাস চাষ উপযোগী জাত বা রোদ সহ্য (heat tolerant) করতে পারে এমন জাত চাষ করতে হবে। শীতকালীন চাষযোগ্য কিছু জাত রয়েছে যেগুলো গ্রীষ্ম-বর্ষার অতিরিক্ত তাপ সহ্য করতে পারে না ।
আর বারোমাসি জাতের বেগুন চাষ এর জন্য বছরের যেকোন সময় চারা করা যাবে । এই জাত গুলো আবহাওয়ার প্রতি কম সংবেদনশীল এবং জীবনীশক্তি বেশি হয়ে থাকে ।
বেগুন চাষের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ (রোদ-আলো):
বেগুন গাছ রোদ-আলো পূর্ণ জায়গায় ভালো হয়। ছায়ায় বেগুন এর ফলন ভালো হয় না ।
মোটামুটি একটা ফলন পেতে মিনিমাম ৬ ঘন্টা রোদ পায় এমন জায়গায় বেগুন গাছ রাখতে হবে ।
আর সবোর্চ্চ ফলন পেতে পূর্ণ দিন রোদ পায় এমন জায়গায় রাখতে হবে ।
তাই ,মোটামুটি সারা দিন রোদ পায় এমন জায়গা বেগুন চাষ এর জন্য নির্বাচন করুন ।
বেগুন এর চারা তৈরির সহজ উপায়:
টবে বেগুন চাষ করার জন্য প্রথমে আলাদা করে চারা তৈরি করে নিতে হবে অথবা চারা নার্সারি থেকে সংগ্রহ করতে হবে। চারা আলাদা করে টবে, সিডলিং ট্রে, সিডলিং ব্যাগ, ওয়ান টাইম গ্লাসে তৈরি করে নিতে হবে ।
বীজ মূল টবে বপন করে চারা তৈরি না করে আলাদা করে অন্য টবে চারা করে নিয়ে পরে মূল টবে রোপণ করলে গাছের জীবনীশক্তি বৃদ্ধি পায়।
চারা তৈরির জন্য –
- বেগুন এর বীজ প্রথমে টিস্যু পেপার এর মাধ্যমে জার্মিনেট করে নিতে হবে ।
- জার্মিনেট করা বীজ সিডলিং ট্রে বা সিডলিং ব্যাগে দিতে হবে ।
- ২-৩ দিন এর মধ্যে চারা বের হবে। চারার বয়স যখন ৩০-৩৫ দিন হবে তখন মূল টবে রোপণ করতে হবে । তখন সাধারণত চারায় ৫-৬ টি পাতা থাকে ।
বেগুনের জন্য উপযুক্ত টব/পাত্র নির্বাচন:
মৌসুমী জাতের বেগুন চাষ এর জন্য উপযুক্ত টব হলো ১২ ইঞ্চি টব বা ৮-১০ লিটার বালতির সমান আয়তনের পাত্র বা গ্রো ব্যাগ । এর চেয়ে ছোট পাত্রেও হবে যেমন – পাঁচ লিটার এর বোতল বা এর সম আয়তনের পাত্র , আর পাঁচ লিটার এর থেকে ছোট পাত্রে বেগুন চাষ করা ঠিক হবে না ।
টব/পাত্র যতো ছোট হবে গাছের বৃদ্ধি ততো কম, ফলন ততো কম হবে । গাছ কিছু ফলন দিয়ে ঝিমিয়ে পরবে, সহজে রোগাক্রান্ত হবে । অর্থাৎ, সহজ কথায় আপনি যেমন input ( খাদ্য/মাটি ) দিবেন, গাছও তেমন output ( বেগুন/ফলন) দিবে ।
আর বারোমাসি জাতের বেগুন চাষ এর জন্য ১৫-২০ লিটার বালতি বা সম আয়তনের পাত্র নির্বাচন করলে সবচেয়ে ভালো হবে ।
মাটি প্রস্তুত প্রণালী :
(Note: ১ টেবিল চামচ= ১০-১২ গ্রাম ; ১ চা চামচ= ৪ গ্রাম ; ১ টেবিল চামচ= ৩ চা চামচ ; ১ লিটার মাটি = ১.৫ কেজি)
বেগুন যেহেতু একটি ফলদ্বায়ী সবজি (fruiting vegetables) তাই এর প্রচুর খাদ্যের প্রয়োজন পরে । এজন্য মাটি তৈরিতে যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টি উপাদান দিতে হবে ।
টবের জন্য মাটি তৈরিতে –
- দোআঁশ মাটি ৫০% , গোবর পঁচা ৩০% আর ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করলে দোআঁশ মাটি ৬০% , ভার্মি কম্পোস্ট ২০% আর বাকি ২০% এর জন্য কোকোপিট ১০% আর নদীর লাল বালু ১০% হারে মেশাতে হবে । নদীর বালু না থাকলে কোকোপিট ব্যবহার করতে হবে ২০% । তবে কোকোপিট ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা নেই , হাতের কাছে থাকলে ব্যবহার করবেন।
- রাসায়নিক সার- মাটি তৈরির সময় প্রত্যেক ৫ লিটার পাত্রের সমান মাটিতে ১ চা চামচ টিএসপি (TSP) বা ডিএপি (DAP) সার + ১ চা চামচ এমওপি (MOP) সার মেশাতে হবে । আপনি যদি সম্পূর্ণ জৈব উপায়ে চাষ করতে চান তাহলে রাসায়নিক সার ব্যবহারের দরকার নেই । এতে যদিও ফলন কম হবে।
- এভাবে মাটি প্রস্তুত করে ১০-১৫ দিন রেখে দিতে হবে । তারপর গাছ রোপণ করতে হবে।
গাছ রোপণ পরবর্তী সার ব্যবস্থাপনা:
বেগুন চাষ এর জন্য গাছ রোপণ করার পর আরও তিন বার সার প্রয়োগের প্রয়োজন পরে। এতে সবোর্চ্চ ফলন নিশ্চিত হয় ( পরীক্ষিত) ।
- চারা রোপণ এর ২৫-২৮ দিন পর ৫ লিটার আয়তনের টবের সমপরিমাণ মাটির জন্য হাফ চা চামচ ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দিয়ে নিড়ানি দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগের পরের দিন পানি সেচ দিতে হবে।
- একই পরিমাণ ইউরিয়া সার পুনরায় চারা রোপণ এর ৫০-৫৫ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। এই সময় ইউরিয়ার পাশাপাশি হাফ চা চামচ পটাস সার প্রয়োগ করতে হবে ।
- চারা রোপণ এর ৭০-৭৫ দিন পর ঐ একই পরিমাণ ইউরিয়া আবার প্রয়োগ করতে হবে ।
এই তিন বারের পর আর রাসায়নিক সার প্রয়োগ এর প্রয়োজন পরে না। এতেই সবোর্চ্চ ফলন নিশ্চিত হয় ।
আর বারোমাসি জাতের জন্য এই তিন বার সার দেওয়ার পরবর্তীতে অভাব জনিত লক্ষণ এর উপর নির্ভর করে সার প্রয়োগ করতে হবে ।
জৈব সার –
চারা রোপণ এর পর প্রতি ১৫ দিন পর পর ৫ লিটার আয়তনের টবের মাটির জন্য এক মুঠো করে ভার্মি কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। টবের উপরের মাটি আলগা করে জৈব সার মাটিতে ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে ।
তবে ৭০-৮০ দিন পর্যন্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগ এর সময়কালে জৈব সার প্রয়োগ না করে পরবর্তীতে চারা রোপণ এর ৮০-৯০ দিন পর থেকে জৈব সার ১০-১৫ দিন অন্তর অন্তর ব্যবহার করলে ভালো হয়।
আর যদি, সম্পূর্ণ জৈব উপায়ে বেগুন চাষ করতে চান তাহলে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে শুরু থেকেই জৈব সার প্রয়োগ করে যেতে হবে ।
বেগুন উত্তোলন/হার্ভেস্ট :
চারা রোপণ এর ৬০ দিন এর মধ্যে ফুল/কলি আসা শুরু হয় এবং ৬০-৭০ দিনের মধ্যে বেগুন ধরা শুরু হয় ।
বেগুন বেশি পরিপক্ক হয়ে গেলে স্বাদ কমে যায় তাই সময়মতো নিয়মিত বেগুন তুলে নিতে হবে । বেগুন এর বোঁটা অনেক শক্ত হয় , অনেক সময় খালি হাতে বেগুন তুললে গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । তাই, ধারালো ছুরি, কাঁচি দিয়ে বেগুন গাছ থেকে তুলে নিতে হবে ।
বেগুন এর রোগ-বালাই :
বেগুন সহ অন্যান্য সকল শাক-সবজি অল্প করে ছাদে/টবে চাষ করলে পোকা-মাকড় এর উৎপাত ব্যাপক হারে চোখে পরে । বেগুন চাষ এ সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ।
এখানে কিছু প্রধান রোগ/সমস্যা ও তার সমাধান উল্লেখ করা হয়েছে । এর বাইরে অন্য কোন সমস্যা আপনার গাছে পরিলক্ষিত হলে কমেন্ট করে জানাবেন, সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করব ।
১. মিলিবাগ বা ছাতরা পোকার আক্রমণ :
বেগুন গাছে মিলিবাগ এর আক্রমণ হয়ে থাকে। মিলিবাগ গাছের পাতা,কান্ড থেকে রস চুষে খায় ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পরে, ফলন কমে যায় । আক্রমণের এক পর্যায়ে শুটি মোল্ড ছত্রাক জন্ম নেয় । তখন আক্রান্ত স্থান কালো ঝুলের মতো দেখায়।
২. ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ:
এই পোকা পট বোরার নামে পরিচিত। যা ফল , কচি ডগা ছিদ্র করে খায় এবং বেগুন এর ফুলের কুঁড়ি ও খেয়ে ফেলে। এই পোকা বেগুন চাষ এর প্রধান শত্রু বলা চলে , ব্যাপক ভাবে বিস্তৃত এই পোকা ।
লক্ষণ : চারা রোপণ এর ১-১.৫ মাসের মধ্যে এই পোকার আক্রমণ দেখা যায়। ফুল আসা শুরু হলে আক্রমণ আরও বৃদ্ধি পায় । প্রথম অবস্থায় কচি ডগা ছিদ্র করে ভেতরের অংশ খেয়ে ফেলে , ফলে ডাল নেতিয়ে পরে । পরবর্তীতে কচি ফলে আক্রমণ করে এবং জীবনকাল পূর্ণ করে বেগুন ছিদ্র করে বাইরে বের হয়ে আসে ।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা:
গ্রীষ্মকালের উষ্ণ আবহাওয়ায় এই পোকার আক্রমণ প্রকট হয় , শীতকালে আক্রমণ অনেক কম হয় । তাই , শীতকালীন আগাম জাতের বেগুন চাষ করতে হবে ।
পোকা আক্রান্ত ডগা,ফল নিয়মিত বাছাই করে বাগান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।
জৈব বালাইনাশক প্রয়োগ : নিম তেল বা অনুমোদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করলে এই পোকা কিছুটা দমন হয় । এর জন্য প্রত্যেক সপ্তাহে একবার করে নিম তেল স্প্রে করতে হবে ।
তবে আক্রমণ প্রকট হলে জৈব কীটনাশক এ কাজ নাও হতে পারে ।
রাসায়নিক কীটনাশক: অধিক আক্রমণ হলে তখন রাসায়নিক কীটনাশক ব্যতিত ফসল রক্ষা করা সম্ভব হয় না ।
এজন্য সাইপারমেথ্রিন বা এমামেকটিন বেনজোয়েট জাতীয় কীটনাশক ১২-১৫ দিন পর পর দুই-তিন বার প্রয়োগ করলে পট বোরার সম্পূর্ণ দমন হয় ।
৩. বেগুনের ক্ষুদে পাতা রোগ :
এই রোগে গাছের কান্ডের ডগায় অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাতার সৃষ্টি হয় ।
জাব পোকা ও জ্যাসিড পোকা এই রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে ।
তাই, গাছে এসব পোকা দেখা মাত্রই ধ্বংস করতে হবে । আর কোন গাছ আক্রান্ত হলে তা বাগান থেকে দূরে সরিয়ে ফেলতে হবে ।
জাব ও জ্যাসিড পোকা দমনের জন্য ইমিডাক্লোপিড কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
৪. বেগুন এর জ্যাসিড, সাদা মাছি ও জাব পোকা :
জ্যাসিড বা শোষক পোকা: পাতার নিচের দিকে সবুজ রংয়ের ছোট ছোট পোকা দেখা দেয় যেখানে নিম্ফ ও পূর্ণ বয়স্ক পোকা একসাথে অবস্থান করে।
পাতার রস চুষে খায় ফলে পাতায় হলুদ দাগ দেখা যায়, পাতা বিবর্ণ হয়ে পড়ে এবং এক সময় পাতা শুকিয়ে যায়। এই পোকার আক্রমণ গাছ রোপণ এর দিন থেকে ফসল উত্তোলনেল শেষ দিন পর্যন্ত দেখা যায়, অর্থাৎ মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে ।
বেগুন এর সাদা মাছি: পাতার নিচের দিকে হলুদাভ সাদা রংয়ের ছোট ছোট পোকা দেখা দেয় যেখানে নিম্ফ ও পূর্ণ বয়স্ক পোকা একসাথে অবস্থান করে ।
পাতার রস চুষে খাওয়ার ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে।
জাব পোকা: পূর্নাঙ্গ পোকা এবং বাচ্চা উভয়ই দেখতে ছোট আকৃতির, বাদামি অথবা বাদামি কালো রঙের। এরা দলবদ্ধ ভাবে থাকে। এগুলো খালি চোখে দেখা যায় । পাতার উল্টা পাশে পোকার উপস্থিতি বেশি থাকে।
পাতা থেকে রস চুষে খায় এবং কান্ডেও আক্রমণ করে । আক্রমণের এক পর্যায়ে পাতা -কান্ড হলুদ হয়ে শুকিয়ে যায়।
দমন ব্যবস্থা: এই পোকা গুলো দমন করতে নিম তেল নিয়মিত স্প্রে করতে হবে। সাবান-পানি ব্যবহারেও কিছুটা দমন হয় ।
তবে আক্রমণ অধিক হলে এসব উপায়ে দমন সম্ভব হয় না , তখন রাসায়নিক কীটনাশক প্রয়োগ এর প্রয়োজন পরে ।
রাসায়নিক কীটনাশক – ইমিডাক্লোপ্রিড , সাইপারমেথ্রিন, থাইম্যাথক্সাম, ডায়মেথোয়েট এজাতীয় কীটনাশক এর যেকোন একটি প্রয়োগে জাব পোকা, জ্যাসিড, সাদা মাছি ও মিলিবাগও দমন হবে ।
৫. বেগুন এর ক্ষুদ্র লাল মাকড় –
মাকড় পাতার উল্টো পাশে অবস্থান করে রস চুষে খায় এবং মাকড় খালি চোখে দেখা যায় না । এতে পাতায় বিন্দু বিন্দু হলদে দাগের সৃষ্টি হয় , পাতা সংকুচিত হতে থাকে । শেষে পাতা একদম শুকিয়ে ঝড়ে পরে ।
দমন ব্যবস্থা: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাকড় দমনের জন্য নিম তেল ও সাবান পানি ব্যবহারের কথা বলা হয়ে থাকে । কিন্তু বাস্তবতা হলো মাকড় দমনে এসবের কোন কার্যকরী ভূমিকা নেই ।
তাই, মাকড় দমন করতে চাইলে রাসায়নিক কীটনাশক অব্যষই ব্যবহার করতে হবে । এর জন্য ৮০% সালফার (থিওভিট) বা এবামেকটিন ( ভার্টিমেক) এজাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। এগুলো ব্যবহারে মাকড় সম্পূর্ণ দমন হবে, নতুন করে আর কোন পাতায় আক্রমণ করতে পারবে না ।
৬. ছত্রাকজনিত নানা সমস্যা:
বেগুন চাষ করতে গেলে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া জনিত নানা সমস্যা দেখা দেয়। এদের মধ্যে কিছু সমস্যা মারাত্মক যার কারণে গাছ মারাও যেতে পারে । এখানে কিছু সমস্যা ও সমাধান বর্ণনা করা হলো –
ঢলে পড়া রোগ –
এটি ছত্রাকজনিত একটি মারাত্মক রোগ যার কারণে গাছ ঢলে পড়ে ধীরে ধীরে গাছ মারা যায় । প্রথমে পাতা হলুদ হয়ে, শুকিয়ে যেতে থাকে ।
ভার্টিসিলিয়াম উইল্ট রোগ –
গাছের পাতার একাংশ হলুদ হতে থাকে , যা ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ পাতা হলুদ হয়ে শুকিয়ে যায় । এতে ধীরে ধীরে গাছ ঢলে পড়ে ও মারা যায় ।
এসব রোগের জন্য আক্রমণ হওয়ার আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে। গাছ ঢলে পড়লে সেই গাছ আর বাঁচানো সম্ভব হয় না তবে আক্রমণ এর প্রথম পর্যারে ছত্রাকনাশক (কার্বন্ডাজিম+ম্যানকোজেব) স্প্রে করলে কাজ হতে পারে ।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা –
আক্রান্ত গাছ বাগান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে
চারা রোপণ এর আগে শোধন করে নিতে হবে । শোধন করতে এক লিটার পানিতে ১ চা চামচ (কার্বন্ডাজিম) জাতীয় ছত্রাকনাশক মিশিয়ে সেই পানিতে চারার গোড়া ১৫-২০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে ।
চারা রোপণ এর ৩০ দিন পর (কার্বন্ডাজিম+ম্যানকোজেব) জাতীয় ছত্রাকনাশক ভালো করে গাছে স্প্রে করে দিতে হবে । এক লিটার পানিতে এক চা চামচ ছত্রাকনাশক পাউডার মেশাতে হবে ।
পাউডারি মিলডিউ রোগ –
পাতা ও কান্ডে সাদা পাউডারের মতো দাগ দেখা যায় এবং তা ধীরে ধীরে সমস্ত পাতায় ছড়িয়ে পরে । আক্রমণ বেশি হলে একসময় পাতা হলুদ বা কালো হয়ে গাছ মারা যায় ।
দমন ব্যবস্থা: আক্রমণের প্রথম পর্যায়ে গাছের আক্রান্ত অংশ সরিয়ে ফেলতে হবে ।
(ম্যানকোজেব+মেটালোক্সিল) জাতীয় ছত্রাকনাশক এ ভালো কাজ হয় । তবে ৮০% সালফার বা কার্বন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করলেও কাজ হবে ।
৭. বেগুন এর ফল ফেটে যাওয়া ও ফল বিকৃতি :
মূলত অনিয়মিত সেচ প্রদান ও মাটিতে অণুখাদ্যের অভাব জনিত কারণে ফল ফেটে যেতে পারে ।
তাই , নিয়মিত সেচ প্রদান করতে হবে ও ভালো মানের জৈব সার প্রতি ১৫-২০ দিন পর পর ১২ ইঞ্চি টবের জন্য দুই মুঠো পরিমাণ প্রয়োগ করতে হবে ।
