You are currently viewing টবে ড্রাগন ফল চাষ (পিলার যুক্ত/পিলার বিহীন উভয় পদ্ধতি)

টবে ড্রাগন ফল চাষ (পিলার যুক্ত/পিলার বিহীন উভয় পদ্ধতি)

আকর্ষণীয় কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রতিনিয়ত আমাদের দেশে ড্রাগন ফল চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে । ড্রাগন ফল স্থায়ী গাছ ও বছরের প্রায় ৮-১০ মাস ধরে টানা ফল দিয়ে থাকে। আবার এটি মরু অঞ্চলের গাছ হওয়ায় পানি কম পরিমাণে লাগে এবং ছাদের অতিরিক্ত গরমে ফলনে বৃঘ্ন ঘটে না, অর্থাৎ ছাদ বাগানের জন্য দারুন উপযোগী।

সূচিপত্র –

  • ড্রাগন ফল গাছের জাত
  • চারা রোপণের সময়
  • ড্রাগন ফলের চারা তৈরি
  • ড্রাগন ফলের জন্য কেমন টব দরকার
  • মাটি প্রস্তুত প্রণালী
  • পিলার ছাড়া টবে ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি
  • টবে পিলার যুক্ত চাষ পদ্ধতি
  • ড্রাগন ফল গাছের পরিচর্যা
  • ড্রাগন ফুলের কৃত্রিম পরাগায়ন
  • ড্রাগনের রোগ-বালাই ও সমাধান

ড্রাগন ফল গাছের জাত :

বিদেশি ও তুলনামূলক নতুন হওয়ায় ড্রাগন ফলের উদ্ভাবিত জাত সংখ্যা কম। তারপরও কয়েকটা জাত খুব ভালো ফলাফল দিচ্ছে আমাদের দেশে। এছাড়াও আমদানি করা অনেক বিদেশি জাতের চাষ হচ্ছে ।আমাদের আবহাওয়া উপযোগী উল্লেখযোগ্য কিছু জাত –

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক উদ্ভাবিত

  • বাউ ড্রাগন ফল -১ (শাঁস সাদা)
  • বাউ ড্রাগন ফল -২ (শাঁস লাল)
  • বাউ ড্রাগন ফল -৩
  • বাউ ড্রাগন ফল -৪

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত

  • বারি ড্রাগন ফল -১ (শাঁস গোলাপি)

এ জাতটি সুস্বাদু মিষ্টি স্বাদের ও অধিক রসালো,পাকা ফলের রং লাল । ফলের আকার বড় ও ফলনও অধিক হয়ে থাকে।

শৌখিন বাগানিদের কাছে হলুদ ড্রাগন ফল পাওয়া যায় । এটির বাণিজ্যিক উৎপাদন কম হয়ে থাকে।

বিরল প্রজাতির একটি জাত হলো Connie Mayer Dragon Fruit যার ফুল গোলাপি রঙের হয়ে থাকে।

চারা রোপণের সময় :

চারা রোপণের উপযুক্ত সময় মার্চ-অক্টোবর মাস । তবে এপ্রিল মাস সবচেয়ে ভালো সময়, কারণ ড্রাগন ফল গরমের সময় দ্রুত বৃদ্ধি পায় । অন্যদিকে অক্টোবরের পর শীত চলে আসে তখন গাছের বৃদ্ধি হয় না । আর শীতের কয়েক মাস চারা রোপণ থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ শীতে গাছ সুপ্ত অবস্থায় থাকে।

পূর্ণ দিন রোদ-আলো পায় এমন জায়গায় ড্রাগন ফল চাষ করতে হবে। কম আলোতে এটি হয় না, তাই বারান্দায় চাষ করা যাবে না। অধিক রোদ-আলো যুক্ত জায়গা নির্বাচন করতে হবে এজন্য ছাদ একদম উপযোগী জায়গা ।

ড্রাগন ফলের চারা তৈরি :

ড্রাগন ফল চাষ এর জন্য বীজ থেকে চারা করা মোটেও ফলপ্রসূ নয় । যদিও বীজ থেকে সহজেই চারা হয় কিন্তু সমস্যা হলো বীজের গাছের বৃদ্ধি হতে অনেক সময় লাগে। ফল আসতে অনেক দেরী হয় এবং মাতৃগাছের সব গুণাগুণ বজায় থাকে না।

কাটিং থেকে চারা তৈরি – দ্রুত সময়ে ঝামেলা বিহীন ভাবে কাটিং থেকে চারা করা যায় । এছাড়া সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো কাটিং থেকে করা চারায় এক-দেড় বছরের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। চারা করার ধাপসমূহ –

১. ফেব্রুয়ারি – মার্চ মাস কাটিং থেকে চারা করার উপযুক্ত সময় । তবে ডিসেম্বর,জানুয়ারি মাস ব্যতীত বাকি যেকোন সময়ে কাটিং করা যাবে।

২. কাটিং করার জন্য মিনিমাম ৬ মাস বয়সের গাঢ় সবুজ ডাল বাছাই করতে হবে। কাটিং এর সাইজ হবে ৮-১২ ইঞ্চি।

৩. প্রথমে কাটিং গুলোকে ৩-৪ দিন শুষ্ক ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দিতে হবে (air dry করার জন্য)।

৪. তারপর কাটিং গুলোকে চারা করার পলিব্যাগ বা পাত্রের মাটিতে রোপণ করে দিতে হবে।

মাটি তৈরির জন্য ৫০% পঁচা গোবর + ৫০% বেলে মাটির মিশ্রণ বা ৩০% পঁচা গোবর + ৩০% বেলে দোআঁশ মাটি + ৪০% নদীর লাল বালুর মিশ্রণ ব্যবহার করতে হবে।

৫. ৩০-৪৫ দিন এর মধ্যে কাটিং থেকে শিকড় ও কাটিং এর অগ্রভাগ থেকে নতুন কুশি বেরিয়ে আসবে । তখন কাটিং গুলো মূল জমিতে বা টবে রোপণ করা যাবে ।

ড্রাগন ফলের জন্য কেমন টব দরকার :

ড্রাগন ফল চাষের জন্য বড় সাইজের পাত্রের প্রয়োজন হয়। এটি বহুবর্ষজীবি উদ্ভিদ ও ফলদ্বায়ী গাছ হওয়ায় মাটি থেকে প্রচুর পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে থাকে ‌। এজন্য হাফ ড্রাম বা সমসাইজের পাত্র নির্বাচন করতে হবে । একটি হাফ ড্রামে তিন-চার টি গাছ রোপণ করা যাবে।

অনেকে ১২ ইঞ্চি টব, ২০ লিটার এর বালতির মতো পাত্রে গাছ রোপণ করে থাকেন । এতেও কিছু ফল হয় ,তবে মোটামুটি একটা ফলন পেতে মিনিমাম ৫০ লিটারের পাত্রে গাছ লাগাতে হবে । আর, দীর্ঘ কালীন ভালো ফলন নিশ্চিত করতে অব্যষই হাফ ড্রাম বা স্থায়ী বেডে চাষ করতে হবে।

মাটি প্রস্তুত প্রণালী :

(Note: ১ টেবিল চামচ= ১০-১২ গ্রাম ; ১ চা চামচ= ৪ গ্রাম ; ১ টেবিল চামচ= ৩ চা চামচ ; ১ লিটার মাটি = ১.২-১.৫ কেজি)

ড্রাগন একটি ফলদ্বায়ী গাছ তাই এর প্রচুর খাদ্যের প্রয়োজন পরে । আবার ড্রাগন ফল epiphytic cactus হওয়ায় অধিক জৈব পদার্থ যুক্ত মাটি পছন্দ করে। মাটি তৈরির ক্ষেত্রে আরেক টা বিষয় মাথায় রাখতে হবে তা হলো – মাটিতে জলাবদ্ধতা যেনো না হয় ।

তাই মাটি তৈরিতে –

১. গোবর পঁচা ৪০% + নদীর লাল বালু ৩০% + বেলে দোআঁশ মাটি ৩০% মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে । আর কোকোপিট ব্যবহার করলে গোবর পঁচা ৪০% + বেলে দোআঁশ মাটি ৩০% + কোকোপিট ৩০% মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে ।

২. রাসায়নিক সার- মাটি তৈরির সময় প্রত্যেক ৫ লিটার পাত্রের সমান মাটিতে ১ চা চামচ টিএসপি (TSP) বা ডিএপি (DAP) সার + হাফ চা চামচ এমওপি (MOP) সার + হাফ চা চামচ জিপসাম সার মেশাতে হবে । অর্থাৎ – ১০০ কেজি মাটির জন্য ৪০-৫০ গ্রাম টিএসপি, ২০-৩০ গ্রাম এমওপি ও ২০-৩০ গ্রাম জিপসাম মেশাতে হবে।

৩. এভাবে মাটি প্রস্তুত করে ১০-১৫ দিন রেখে দিতে হবে ‌। তারপর গাছ রোপণ করতে হবে।

পিলার ছাড়া টবে ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি :

ছোট সাইজের টবে ড্রাগন ফল চাষ করলে তখন পিলার স্থাপনের সুযোগ থাকে না । তবে ড্রাগন গাছের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো – এর ঝুলন্ত ডাল-পালায় হরমোন এক্টিভিটি বেশি হওয়ায় ফুল -কলি বেশি আসে । তাই, সবসময় এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে যথেষ্ঠ পরিমান ডাল-পালা ঝুলে থাকে ।

এ পদ্ধতির ধাপ গুলো হলো-

১. টবের চার কোণায় চারটি ৩-৪ ফুট (টবের সাইজ এর উপর নির্ভরশীল) লম্বা বাঁশের খুঁটি বা কাঠের খুঁটি পুঁতে দিয়ে , খুঁটির মাঝ বরাবর একটি ও উপরে আরেক টি সাইকেলের টায়ার দিয়ে রিং করে দিতে হবে ।

২. বাঁশের চেয়ে কাঠের খুঁটির স্থায়ীত্ব বেশি তাই কাঠের খুঁটি ব্যবহার করলে ভালো হবে । তবে বাঁশ বা কাঠ যাই হোক নিয়মিত খেয়াল রাখতে হবে, আর খুঁটি পচে গেলে দ্রুত পরিবর্তন করে দিতে হবে ভেঙে পরার আগেই।

৩. বাঁশ বা কাঠের চেয়ে উত্তম হলো ইস্পাতের রড (৪ সে.মি) বা জি আই পাইপ ( ২ ইঞ্চি) ব্যবহার করা । তাহলে দীর্ঘ কালীন চিন্তা মুক্ত চাষাবাদ সম্ভব হবে।

৪. ২-৩ টি গাছ রোপণ করে সেগুলোকে ৩-৪ ফুট পর্যন্ত রিং এর মধ্যে সোজা করে বৃদ্ধি করার পর আশেপাশে ঝুলে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে ।

শুধুমাত্র ছোট সাইজের টবে ২০-৫০ লিটার টবে চাষের ক্ষেত্রে পিলার বিহীন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। অন্যথায় পিলার , টায়ার যুক্ত পদ্ধতি সবচেয়ে উত্তম ও টেকসই।

টবে পিলার যুক্ত চাষ পদ্ধতি :

পিলার দিয়ে চাষ করতে চাইলে টব মিনিমাম হাফ ড্রাম বা সমপরিমাণ বড় পাত্র হতে হবে । এক্ষেত্রে ধাপ গুলো হলো –

১. কংক্রিটের বা কাঠের তৈরি শক্তপোক্ত পিলার নিতে হবে ।

২. টবের তলায় পানি নিষ্কাশনের জন্য একাধিক ছিদ্র করতে হবে ।

৩. টবের মাঝবরাবর পিলার দাঁড় করিয়ে দিয়ে , টবের নিচে ৬-৮ ইঞ্চি পরিমাণ ইটের বা পাথরের টুকরো দিয়ে একটি লেয়ার এর মতো তৈরি করতে হবে।

৪. তারপর ইট বা পাথরের টুকরোর উপর বালু দিয়ে একটি লেয়ার তৈরি করে দিতে হবে। বালু এমন ভাবে দিতে হবে যাতে শুধু ইট/পাথরের টুকরো গুলো ঢেকে থাকে।

৫. এরপর টবের বাকি অংশ আগে থেকে তৈরি করা মাটির মিশ্রণ দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে ।

৬. মাটি ভরাটের পর পিলার এর উত্তর দিক অর্থাৎ টবের উত্তর পাশ ব্যতীত বাকি তিন দিকে তিনটি ড্রাগন চারা রোপণ করে দিতে হবে।

৭. পিলার এর মাথায় একটি টায়ার স্থাপন করে দিতে হবে ।

ড্রাগন ফল গাছের পরিচর্যা :

রাসায়নিক সার প্রয়োগ – গাছ রোপণ করার পর প্রত্যেক বছর ৩ বার সার প্রয়োগ করতে হবে- ফ্রেব্রুয়ারি ,জুন ও অক্টোবর এই তিন সময়ে ।

১. প্রতিবার সার প্রয়োগে প্রতি হাফ ড্রাম মাটির জন্য ১০-১৫ গ্রাম টিএসপি বা ডিএপি সার, সমপরিমাণ ইউরিয়া ও এমওপি সার (পটাস সার) মাটিতে ছিটিয়ে দিয়ে নিড়ানি দিয়ে উপরিভাগের মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগের পরের দিন পানি সেচ দিতে হবে।

হাফ ড্রাম ছাড়া অন্য টবে সার প্রয়োগে প্রতি ৫ লিটার সমান মাটির জন্য ১.৫-২ গ্রাম হারে টিএসপি, ইউরিয়া ও পটাস সার দিতে হবে। 

এরকম হারে সার বছরের ঐ উক্ত তিন সময়ে মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে।

জৈব সার প্রয়োগ – পূর্ববর্তী আলোচনায় বলা হয়েছে ড্রাগন জৈব পদার্থ বেশি পছন্দ করে। তাই, প্রতি ১-২ মাস পর পর নিয়মিত জৈব সার প্রয়োগ করে যেতে হবে। গাছ প্রতি ১-২ মুঠো করে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। টবের উপরের মাটি আলগা করে জৈব সার মাটিতে ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে ।

কিছু বিশেষ পরিচর্যা:

  • ড্রাগন ফল গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না । তাই, পানি যেনো না জমে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • ড্রাগন ফল গাছ খরা সহ্য করতে পারে না। আর গাছে ফুল ও ফল থাকাকালীন মাটিতে যেনো পর্যাপ্ত রস থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
  • আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার করে দিতে হবে ।
  • ড্রাগন ফল গাছে প্রচুর শাখা-প্রশাখার সৃষ্টি হয়। ফল দেওয়া শেষ হলে প্রধান শাখা সেখান থেকে সৃষ্টি সেকেন্ডারি শাখা পর্যন্ত রেখে বাকী টারসিয়ারি শাখা সহ অন্যান্য রোগাক্রান্ত,অধিক চিকন শাখা ছাঁটাই করে দিতে হবে । আর রোগাক্রান্ত শাখা যত দ্রুত সম্ভব কেটে দিতে হবে ।‌ ডাল ছাঁটাই এর পর ছত্রাকনাশক স্প্রে করে দিতে হবে।

ড্রাগন ফুলের কৃত্রিম পরাগায়ন :

ড্রাগন ফুল রাতের বেলা ফুটে তখন পোকা-মাকড় কম থাকায় পরাগায়ন সংঘটিত হতে পারে না অনেক সময়। এতে, ফুল ঝরে পরা ও ছোট ফল হলুদ হয়ে ঝরে পরার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া আবহাওয়া গত কারণেও অনেক সময় স্ব-পরাগায়ন হয় না।

এরকম সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া তথা প্রত্যেক ফুল থেকে ফল হওয়া নিশ্চিত করার জন্য দরকার ফুলের কৃত্রিম পরাগায়ন।

পরাগায়ন পদ্ধতি – ড্রাগন গাছে উভলিঙ্গ ফুল হয়ে থাকে। ফুল গুলোর মধ্য অংশে চারপাশে অনেক গুলো সমান লম্বা পুংকেশর দ্বারা বেষ্টিত অপেক্ষাকৃত লম্বা একটি গর্ভদন্ড দেখা যায়।

এক্ষেত্রে ব্রাশ দিয়ে ফুলের পুংকেশর এর চারপাশে কয়েকবার ঘুরিয়ে পরাগরেণু মাখিয়ে তা আবার স্ত্রী স্তবক এর অংশে আলতো করে ঘষে লাগিয়ে দিতে হবে। অথবা একটি বাটি নিয়ে তার উপর ফুল নাড়ালে পাউডার এর মতো সাদা সাদা অনেক পরাণরেণু ঝরে পরে জমা হবে। পরে এই পরাগরেণু ব্রাশে মাখিয়ে ফুলের গর্ভদন্ডে লাগিয়ে দিতে হবে।

পরাগায়ন করে দেওয়ার পর যদি ঐ রাতে বৃষ্টি হয় বা বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে ফুলটি পলিথিন ব্যাগ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।

ড্রাগন ফলের রোগ-বালাই ও সমাধান :

ড্রাগন ফল গাছে পোকা-মাকড় এর আক্রমণ থেকে বেশি ছত্রাক জনিত সমস্যা দেখা দেয়।

এখানে কিছু প্রধান রোগ/সমস্যা ও তার সমাধান উল্লেখ করা হয়েছে ‌। এর বাইরে অন্য কোন সমস্যা আপনার গাছে পরিলক্ষিত হলে কমেন্ট করে জানাবেন, সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করব ‌।

১. কান্ড ও গোড়া পচাঁ রোগ – ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগ হলে গাছের কাণ্ডে প্রথমে হলুদ রং এবং পরে কালো রং ধারণ করে এবং পরবর্তীতে ঐ অংশে পঁচন শুরু হয় এবং পঁচার পরিমাণ বাড়তে থাকে। একসময় কান্ডের মধ্যের শক্ত অংশ বাদে বাকি সব অংশ পচে যায়।

২. মূল পঁচা রোগ – ছত্রাক এর আক্রমণে এই রোগ হয়ে থাকে ।‌ প্রথমে শিকড় এর প্রান্ত ভাগে পচন শুরু হয় পরবর্তীতে সম্পূর্ণ শিকড় পচে যায়। গাছ নির্জীব হয়ে যায়, বৃদ্ধি থেমে যায়। এ রোগের প্রধান কারণ গোড়ায় পানি জমে থাকা । তাই,সুনিষ্কাশন ব্যবস্থায় ড্রাগন চাষ করতে হবে।

এ দুটি রোগ দমনের জন্য (কার্বন্ডাজিম+ম্যানকোজেব ) জাতীয় মিক্স ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে। ১৫ দিন পর পর দুই বার ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করলে এসব রোগ দমন হবে বা প্রয়োজনে আরও কয়েক বার স্প্রে করতে হবে।

৩. অ্যানথ্রাকনোজ – ছত্রাক এর আক্রমণে এই রোগের সৃষ্টি হয় । এ রোগে প্রথমে কান্ডে বাদামি বা লাল গোলাকার রিং এর মতো দাগের সৃষ্টি হয় । পরে দাগ গুলো অধিক বৃদ্ধি পায় ও আক্রান্ত স্থান পঁচতে শুরু করে।

এ রোগে প্রথম অবস্থায় আক্রান্ত স্থান কেটে অপসারণ করতে হবে । কাটা জায়গায় ছত্রাকনাশক এর প্রলেপ লাগিয়ে দিতে হবে । এছাড়া আক্রমণ অধিক হারে দেখা দিলে (কার্বন্ডাজিম+ম্যানকোজেব ) জাতীয় মিক্স ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে।

৪. জাব পোকা ও মিলিবাগ – ড্রাগন ফল গাছে পোকার আক্রমণ কম তবে মাঝে মাঝে মিলিবাগ/জাব পোকা চোখে পরে । এগুলো কান্ড ,কচি কান্ড, ফুল এর গায়ে লেগে থেকে রস চুষে খায় ।

এসব পোকা দমনের জন্য গাছের সংখ্যা কম হলে হাত সাফাই উত্তম অর্থাৎ ব্রাশ দিয়ে পোকা গাছ থেকে ছাড়িয়ে পিষে মেরে ফেলা । আক্রমণের প্রথম পর্যায়ে নিম তেল বা সাবান পানি স্প্রে করলেও কাজ হয় ।তবে আক্রমণ অধিক হারে হলে তখন কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। ইমিডাক্লোপিড গ্রুপের কীটনাশক প্রয়োগে এসব পোকা দমন হয় । বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশে এই কীটনাশক পাওয়া যায়।

পরিশেষে – ড্রাগন বিদেশি ফল হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে ছাদ বাগানের একটি সাধারণ গাছ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ হলো ঝামেলা বিহীন স্বল্প যত্নে ড্রাগন ফল চাষ করা যায়। আর উপরোক্ত আলোচনায় সহজ ভাবে এর চাষ পদ্ধতি দেখানো হয়েছে যা আপনাদের উপকারে আসবে।

Leave a Reply