ধনিয়া বিরুৎ জাতীয় স্বল্প কালীন চাষযোগ্য একটি সুগন্ধি মসলা জাতীয় ফসল। ধনিয়া চাষ পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ এমনকি ছোট টবেও চাষ করা যায়।
এর পাতায় থাকে সুগন্ধ যা সালাদ হিসেবে বা তরকারিতে ব্যবহার করা হয় । এছাড়াও ধনিয়া বীজেও রয়েছে সুগন্ধ যা গুঁড়ো করে মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয় আচার,চাটনি এবং বিভিন্ন উপাদেয় রান্নাতে । ধনিয়ার রয়েছে বিভিন্ন ঔষুধি গুণাগুণ ।
সূচিপত্র –
- ধনিয়া বীজ
- ৩ দিনে ধনিয়া বীজ অঙ্কুরিত/জার্মিনেট করার পদ্ধতি
- ধনিয়ার জন্য মাটি তৈরি
- ধনিয়ার জন্য টব নির্বাচন
- ধনিয়ার রোগ-বালাই
- ধনিয়া পাতা উত্তোলন/হার্ভেস্ট
- ধনিয়ার বীজ উৎপাদন
- কিছু সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)
(খুব সহজেই অল্প জায়গায় ধনিয়া চাষ করা যায় । এমনকি বেলকুনি-বারান্দার মতো ছোট জায়গায় টবের মধ্যে চাষ করা যায়। ধনিয়া মূলত শীতকালীন ফসল তবে সারা বছর এর চাষ করা যায় । এখানে মূলত ছাদে,টবে ধনিয়া চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে।)
ধনিয়া বীজ:
ধনিয়া সাধারণত বীজ দিয়ে চাষাবাদ করা হয় । যেকোন বীজের দোকানে অল্প টাকায় ধনিয়া বীজ পাওয়া যাবে । ধনিয়া বীজ সরাসরি মাটিতে বুনে দিয়ে চাষ করা যায়। কিন্তু সমস্যা হলো মাটিতে বীজ জার্মিনেট হতে অনেক সময় লাগে – শীতের সময় ১৫ দিনও লাগতে পারে । তাই প্রথমে বীজ জার্মিনেট করে নিয়ে পরে মাটিতে বুনে দিলে অল্প সময়ের মধ্যে ধনিয়া চাষ করা সম্ভব ।
৩ দিনে ধনিয়া বীজ জার্মিনেট :
১. ধনিয়া বীজ সাধারণত গোল গোল পুরো অবস্থায় থাকে, এতে প্রত্যেক গোল অংশে দুইটি করে বীজ থাকে । প্রথমে এই গোল বীজ গুলো কিছু একটার সাহায্যে অল্প চাপে ভেঙ্গে দুই টুকরো করে নিলে জার্মিনেট ভালো হয় ।
২. বীজ এক রাত ( 12 ঘন্টা ) পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে ।
৩. বীজ গুলো পানি থেকে তুলে পানি ঝরিয়ে বীজ এর সাথে কিছু পরিমাণ ভিজা ককোডাস্ট মেশাতে হবে । ককোডাস্ট এর পরিবর্তে গোবর সার বা ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করা যাবে । গোবর বা ভার্মি কম্পোস্ট এ বীজ দেওয়ার পর ভিজিয়ে নিতে হবে ।
( বীজ গুলো ককোডাস্ট বা ভার্মি কম্পোস্ট এর সাথে না মিশিয়েও শুধু ভিজা সুতির মোটা কাপড়ে মুড়িয়ে রাখলেও হবে ।)
৪. ককোডাস্ট বা ভার্মি কম্পোস্ট মেশানোর পর এক টুকরা সুতির কাপড়ে বীজ গুলো মোটামোটি শক্ত করে মুড়িয়ে বল এর মত বানাতে হবে । কাপড়টি ভিজিয়ে দিতে হবে।
৫. বীজ আর কাপড় দিয়ে তৈরী বল বা পুঁটলি টি একটা air tight box এ ভরে বা শুধু পুঁটলি টি অন্ধকার কোন জায়গায় রেখে দিতে হবে।
৬. তিন থেকে চার দিন এর মধ্যে বীজ জার্মিনেট হয়ে যাবে ।
৭. জার্মিনেট করা বীজ টব , পাত্রে ছিটিয়ে দিয়ে হালকা মাটি দিয়ে ডেকে দিতে হবে ।
৮. দুই – তিন দিন এর মধ্যে চারা বের হতে থাকবে ।
এভাবে বীজ জার্মিনেট করে নিয়ে ধনিয়া চাষ করলে অল্প সময়ের মধ্যে ধনিয়া হার্ভেস্ট করা সম্ভব ।
এছাড়াও সরাসরি মাটিতে বীজ বুনে দিয়েও চাষ করা যায় , এতে সময় বেশি লাগে , চারা হতেই ১২-১৫ দিন লেগে যায় ।
মাটি তৈরি:
ধনিয়ার জন্য সাধারণ বাগানের দোআঁশ মাটি যথেষ্ট । তবে ভালো ফলাফল এর জন্য মাটির সাথে ৩০-৪০% গোবর সার বা ২০% ভার্মি কম্পোস্ট মিশিয়ে দিতে হবে ।
ছোট সাইজের টবে অধিক সময় ধরে ফলনের জন্য ৩০% ককোপিট, ৩০% গোবর সার, ৩০% দোআঁশ মাটি,১০% নদীর বালু মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে ।
টব নির্বাচন:
৭-৮ ইঞ্চি টব , ৫ লিটার এর বোতল এসবের মধ্যেও ধনিয়া চাষ করা যাবে । তবে ধনিয়ার জন্য চওড়া পাত্র , টব অর্থাৎ গামলার মতো চওড়া পাত্র সবচেয়ে ভালো হয় । অধিক সময়ের জন্য অর্থাৎ অনেক বার ধনিয়া পাতা উত্তোলন করতে চাইলে একটু বড় পাত্রে চাষ করতে হবে ।
এছাড়াও কেউ চাইলে বড় বড় গাছের হাফ ড্রামে বা এরকম বড় পাত্রে সাথী ফসল হিসেবে ধনিয়ার চাষ করতে পারবে ।
ধনিয়ার রোগ-বালাই :
চারা ছোট অবস্থায় গোড়া পচেঁ কিছু চারা মারা যায় । যদিও এতে খুব একটা সমস্যা হয় না । এছাড়া পরবর্তীতে তেমন কোন রোগ – বালাই ধনিয়াতে দেখা যায় না । ধনিয়া গাছে সহজে কোন পোকা যায় না, এজন্য অনেক ফসলের সাথে সাথী ফসল হিসেবে ধনিয়ার চাষ করা হয় , এতে পোকার আক্রমণ হ্রাস পায় ।
ধনিয়া পাতা উত্তোলন/হার্ভেস্ট:
২০ দিন বয়সে ধনিয়া পাতা খাওয়ার উপযোগী হয়ে যায় । প্রথম দিকে গোড়া সহ ধনিয়া গাছ তুলে হার্ভেস্ট করতে হবে । বড় বড় গাছ গুলো এবং যে জায়গায় অধিক গাছ রয়েছে সেখান থেকে ধনিয়া তুলতে হবে । এতে পিছিয়ে পরা গাছ গুলো বড় হওয়ার সুযোগ পাবে , আবার অধিক ঘন অবস্থায় থাকলে গাছ দুর্বল, পাতা হলুদ হয়ে যাবে ।
পরবর্তীতে গাছ বড় হয়ে গেলে গোড়া রেখে পাতা কালেক্ট করতে হবে, এতে কিছু দিন পর আবার পাতা হবে । এভাবে একই মৌসুমে অনেক বার ধনিয়া উত্তোলন করা সম্ভব হবে ।
ধনিয়ার বীজ উৎপাদন :
ধনিয়া বীজ মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয় । ধনিয়ায় শীতের শেষের দিকে ফুল হয়ে বীজ হয় । বীজ উৎপাদনে কিছুটা সময় লাগে । বীজ শুকিয়ে গেলে গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় ।
কিছু সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)
১. ধনিয়া সারা বছর চাষ করা যায় ?
উত্তর : হ্যা, ধনিয়া সারা বছর চাষ করা যায়। তবে শীত ব্যতিত অন্য সময়ে চাষ করতে হলে হাইব্রিড জাত চাষ করতে হবে । দেশি সাধারণ জাতে শীত ব্যতীত অন্য সময়ে দ্রুত ফুল চলে আসে ফলে পাতা কম উৎপাদন হয় ।
২. ধনিয়ার সুগন্ধ ছাড়া আর অন্য কোন গুণ আছে?
উত্তর: ধনিয়া একটি ঔষুধি গুণ সম্পন্ন গাছ । এর রয়েছে নানান ঔষধি ব্যবহার এবং আর্য়ুবেদিক বিভিন্ন উপাদান তৈরিতে এটি ব্যবহৃত হয় ।
৩. বীজ ছাড়া অন্য কোন ভাবে ধনিয়া চাষ করা যায় ?
উত্তর : ধনিয়া বীজ ছাড়াও গোড়া থেকে গাছ করা যায় । শিকড় সহ গোড়া মাটিতে লাগিয়ে দিলে কিছু দিন এর মধ্যে নতুন গাছ হয়ে যায় ।
