সবার পরিচিত একটি মসলা জাতীয় ফসল হলো মরিচ যা কাঁচা-পাকা উভয় অবস্থাতেই ব্যবহার করা হয় । অনেকে শখ করে পরিবারের চাহিদা মেটাতে টবে মরিচ চাষ করে থাকেন । এই পোস্টে কিভাবে ছাদে-বারান্দায় খুব সহজেই টবের মধ্যে মরিচ চাষ করা যায়, চাষে কি কি সমস্যা হয় ও সমাধান সহ A-Z বিষয় আলোচনা করা হয়েছে।
সূচিপত্র –
- মরিচ এর প্রকার – ঝাল ও মিষ্টি মরিচ(ক্যাপসিকাম)
- মরিচ চাষ এর সময়
- মরিচ চাষ এর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ (রোদ-আলো)
- মরিচ এর চারা তৈরি
- টব/পাত্র নির্বাচন
- মাটি প্রস্তুত প্রণালী
- গাছ রোপণ পরবর্তী সার ব্যবস্থাপনা
- কাঁচা মরিচ সংগ্রহ ও শুকনো মরিচ উৎপাদন
- মরিচ এর রোগ-বালাই ও সমাধান
- বারোমাসি মরিচ চাষ পদ্ধতি
মরিচ এর প্রকার :
দুই রকমের মরিচ আমাদের দেশে চাষ করা হয় । ঝাল মরিচ যেটা মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয় আর এক ধরনের হলো কম ঝালের মিষ্টি মরিচ যাকে ক্যাপসিকাম বলা হয় ।
ঝাল মরিচ আবার দুই রকমের রয়েছে। একটা মৌসুমী চাষযোগ্য জাত যেগুলোর গাছ ৬-৮ মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এগুলো বৃহৎ আকারে জমিতে চাষাবাদ করা হয় । আর এক ধরনের রয়েছে যা বারোমাসি জাত নামে পরিচিত। বারোমাসি জাতের মরিচ গাছ দীর্ঘ স্থায়ী হয় ২-৫ বছরও গাছ টিকে থাকে, অনেক বড় আকৃতির হয় । এগুলো সাধারণত বসত বাড়ির আঙিনায় চাষ করা হয় পারিবারিক চাহিদা মেটানোর উদ্দেশ্যে ।
কম ঝালের মিষ্টি মরিচ বা ক্যাপসিকাম সাধারণত সালাদ হিসেবে, সবজি হিসেবে তারকারিতে ব্যবহার করা হয়। ক্যাপসিকাম অনেক বড় আকৃতির এবং বিভিন্ন সাইজের হয়ে থাকে।
( বি:দ্র: ঝাল মরিচ আর ক্যাপসিকাম জাতীয় মরিচ উভয়েরই চাষ পদ্ধতি, রোগ-বালাই প্রায় এক একই রকম ।
এখানে মূলত ঝাল মরিচ চাষ পদ্ধতি আলোচনা করা হয়েছে আর ক্যাপসিকাম/মিষ্টি মরিচ এর চাষ পদ্ধতি জানতে পড়ুন
মরিচ চাষের সময় :
বর্তমানে সারা বছর চাষ করা যায় এমন অনেক জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে । তবে মরিচ এর সবচেয়ে ভালো ফলন হয় শীত মৌসুমে । শীতে চাষ করার জন্য সেপ্টেম্বর মাস আর গ্রীষ্মকালীন চাষের জন্য ফেব্রুয়ারি – মার্চ মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময় । এই দুই সময়েই সাধারণত মৌসুমী জাতের মরিচ চাষ করা হয় ।
তবে , শীত ব্যতিত অন্য সময়ে মরিচ করতে চাইলে বারোমাস চাষ উপযোগী জাত বা রোদ সহ্য (heat tolerant) করতে পারে এমন জাত চাষ করতে হবে। শীতকালীন চাষযোগ্য কিছু জাত রয়েছে যেগুলো গ্রীষ্ম-বর্ষার অতিরিক্ত তাপ সহ্য করতে পারে না ।
বর্ষায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় আবার মরিচ গাছ পানি সহ্য করতে পারে না এজন্য বর্ষাকালে নতুন করে মরিচ এর চারা তৈরি, গাছ রোপণ থেকে বিরত থাকতে হবে ।
আর বারোমাসি জাতের মরিচ চাষ এর জন্য বছরের যেকোন সময় চারা করা যাবে । এই জাত গুলো আবহাওয়ার প্রতি কম সংবেদনশীল এবং জীবনীশক্তি বেশি হয়ে থাকে ।
মরিচ চাষের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ (রোদ-আলো):
মরিচ গাছ রোদ-আলো পূর্ণ জায়গায় ভালো হয়। তবে মরিচ ছায়া বা আলো-ছায়া এমন জায়গাতেও চাষ করা যাবে ,এতে গাছের বৃদ্ধি ও ফলন কম হবে।
মোটামুটি একটা ফলন পেতে মিনিমাম ৬ ঘন্টা রোদ পায় এমন জায়গায় মরিচ গাছ রাখতে হবে ।
আর সবোর্চ্চ ফলন পেতে পূর্ণ দিন রোদ পায় এমন জায়গায় রাখতে হবে ।
বারোমাসি জাতের মরিচ গুলোর ক্ষেত্রে দিনে ২-৩ ঘন্টা রোদ পায় এমন জায়গাতেও ভালো মরিচ হয় । ( নিজ পর্যবেক্ষণ )
মরিচ এর চারা তৈরির সহজ উপায়:
টবে মরিচ চাষ করার জন্য প্রথমে আলাদা করে চারা তৈরি করে নিতে হবে অথবা চারা নার্সারি থেকে সংগ্রহ করতে হবে। চারা আলাদা করে টবে, সিডলিং ট্রে, সিডলিং ব্যাগ, ওয়ান টাইম গ্লাসে তৈরি করে নিতে হবে ।
বীজ মূল টবে বপন করে চারা তৈরি না করে আলাদা করে অন্য টবে চারা করে নিয়ে পরে মূল টবে রোপণ করলে গাছের জীবনীশক্তি বৃদ্ধি পায়।
চারা করার জন্য –
১. মরিচ এর বীজ প্রথমে টিস্যু পেপার এর মাধ্যমে জার্মিনেট করে নিতে হবে ।
২. জার্মিনেট করা বীজ সিডলিং ট্রে বা সিডলিং ব্যাগে দিতে হবে ।
৩. ২-৩ দিন এর মধ্যে চারা বের হবে। চারার বয়স যখন ৩০-৩৫ দিন হবে তখন মূল টবে রোপণ করতে হবে । তখন সাধারণত চারায় ৪-৫ টি পাতা থাকে ।
মরিচের জন্য উপযুক্ত টব/পাত্র নির্বাচন:
মৌসুমী জাতের মরিচ চাষ এর জন্য উপযুক্ত টব হলো ১০-১২ ইঞ্চি টব বা ৮-১০ লিটার বালতির সমান আয়তনের পাত্র বা গ্রো ব্যাগ । এর চেয়ে ছোট পাত্রেও হবে যেমন – পাঁচ লিটার এর বোতল বা এর সম আয়তনের পাত্র , এমনকি ২ লিটার বোতলের মতো পাত্রেও মরিচ গাছ হবে । তবে টব/পাত্র যতো ছোট হবে গাছের বৃদ্ধি ততো কম, ফলন ততো কম হবে । গাছ কিছু ফলন দিয়ে ঝিমিয়ে পরবে, সহজে রোগাক্রান্ত হবে । অর্থাৎ, সহজ কথায় আপনি যেমন input ( খাদ্য/মাটি ) দিবেন, গাছও তেমন output ( মরিচ/ফলন) দিবে । একটি পাত্রে একটি মরিচ চারা রোপণ করতে হবে।
আর বারোমাসি জাতের মরিচ চাষ এর জন্য ১৫-২০ লিটার বালতি বা সম আয়তনের পাত্র নির্বাচন করতে হবে । একটি পাত্রে একটি মরিচ চারা অথবা পাত্র 20 লিটার বা এর চেয়ে বড় হলে দুইটি চারা রোপণ করা যাবে ।
মাটি প্রস্তুত প্রণালী :
(Note: ১ টেবিল চামচ= ১০-১২ গ্রাম ; ১ চা চামচ= ৪ গ্রাম ; ১ টেবিল চামচ= ৩ চা চামচ ; ১ লিটার মাটি = ১.৫ কেজি)
মরিচ যেহেতু একটি ফলদ্বায়ী সবজি (fruiting vegetables) তাই এর প্রচুর খাদ্যের প্রয়োজন পরে । এজন্য মাটি তৈরিতে যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টি উপাদান দিতে হবে ।
টবের জন্য মাটি তৈরিতে –
১. দোআঁশ মাটি ৫০% , গোবর পঁচা ৩০% আর ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করলে দোআঁশ মাটি ৬০% , ভার্মি কম্পোস্ট ২০% আর বাকি ২০% এর জন্য কোকোপিট ১০% আর নদীর লাল বালু ১০% হারে মেশাতে হবে ।
২. রাসায়নিক সার- মাটি তৈরির সময় প্রত্যেক ৫ লিটার পাত্রের সমান মাটিতে ১ চা চামচ টিএসপি (TSP) বা ডিএপি (DAP) সার + হাফ চা চামচ এমওপি (MOP) সার মেশাতে হবে । আপনি যদি সম্পূর্ণ জৈব উপায়ে চাষ করতে চান তাহলে রাসায়নিক সার ব্যবহারের দরকার নেই । এতে যদিও ফলন কম হবে।
৩. এভাবে মাটি প্রস্তুত করে ১০-১৫ দিন রেখে দিতে হবে । তারপর গাছ রোপণ করতে হবে।
গাছ রোপণ পরবর্তী সার ব্যবস্থাপনা:
মরিচ চাষ এর জন্য গাছ রোপণ করার পর আরও তিন বার সার প্রয়োগের প্রয়োজন পরে। এতে সবোর্চ্চ ফলন নিশ্চিত হয় ( পরীক্ষিত) ।
১. চারা রোপণ এর ২৫-২৮ দিন পর ৫ লিটার আয়তনের টবের সমপরিমাণ মাটির জন্য হাফ চা চামচ ইউরিয়া সার এবং হাফ চা চামচ পটাস সার (MOP) মাটিতে ছিটিয়ে দিয়ে নিড়ানি দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগের পরের দিন পানি সেচ দিতে হবে।
২. একই পরিমাণ ইউরিয়া ও পটাস সার পুনরায় চারা রোপণ এর ৫০-৫৫ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। অথবা এই সময় ইউরিয়া প্রয়োগ না করে হাফ চা চামচ DAP সার প্রয়োগ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
৩. চারা রোপণ এর ৭০-৭৫ দিন পর ঐ একই পরিমাণ ইউরিয়া ও পটাস সার আবার প্রয়োগ করতে হবে ।
এই তিন বারের পর আর রাসায়নিক সার প্রয়োগ এর প্রয়োজন পরে না। এতেই সবোর্চ্চ ফলন নিশ্চিত হয় ।
জৈব সার –
চারা রোপণ এর পর প্রতি ১৫ দিন পর পর ৫ লিটার বোতল বা সমপরিমাণ টবের মাটির জন্য এক মুঠো করে ভার্মি কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। টবের উপরের মাটি আলগা করে জৈব সার মাটিতে ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে ।
তবে ৭০-৮০ দিন পর্যন্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগ এর সময়কালে জৈব সার প্রয়োগ না করে পরবর্তীতে চারা রোপণ এর ৮০-৯০ দিন পর থেকে জৈব সার ১০-১৫ দিন অন্তর অন্তর ব্যবহার করলে ভালো হয়।
আর যদি, সম্পূর্ণ জৈব উপায়ে মরিচ চাষ করতে চান তাহলে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে শুরু থেকেই জৈব সার প্রয়োগ করে যেতে হবে ।
কাঁচা মরিচ সংগ্রহ ও শুকনো মরিচ উৎপাদন:
চারা রোপণ এর ৩৫-৪০ দিন পর থেকে ফুল/কলি আসা শুরু হয় এবং ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে মরিচ ধরা শুরু হয় ।
কাঁচা মরিচ এর জন্য পরিপক্ক হওয়া মাত্রই মরিচ তুলে নিতে হবে । গাছে মরিচ পাকতে দেওয়া যাবে না, এতে মরিচ এর নতুন ফুল আসা কমে যায় ।
শুকনো মরিচ এর জন্য মরিচ গাছে রেখে পাকাতে হবে। তবে গাছে মরিচ পাকতে শুরু করলে নতুন করে আর তেমন ফুল আসে না , গাছও অনেক টা ঝিমিয়ে পরে । পাকা মরিচ শুকিয়ে নিয়ে শুকনো মরিচ বা বীজ উৎপাদন এর জন্য সংরক্ষণ করে রাখা যাবে ।
মরিচ এর রোগ-বালাই :
মরিচ সহ অন্যান্য সকল শাক-সবজি অল্প করে ছাদে/টবে চাষ করলে পোকা-মাকড় এর উৎপাত ব্যাপক হারে চোখে পরে । মরিচ চাষ এ সবচেয়ে বেশি দেখা যায় পাতা কুঁকড়ানো সমস্যা , এছাড়াও আরও কিছু সমস্যা দেখা যায় ।
এখানে কিছু প্রধান রোগ/সমস্যা ও তার সমাধান উল্লেখ করা হয়েছে । এর বাইরে অন্য কোন সমস্যা আপনার গাছে পরিলক্ষিত হলে কমেন্ট করে জানাবেন, সমাধান দেওয়ার চেষ্টা কর১. মরিচ গাছের পাতা কুঁকড়ানো সমস্যা:
পাতা কুঁকড়ানো সমস্যা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। যেমন – মাকড় বা মাইট, থ্রিপস বা চুষি পোকা, এফিড বা জাব পোকা, সাদা মাছি, ভাইরাস ইত্যাদির আক্রমণে মরিচের পাতা কুঁকড়ানো সমস্যা দেখা দেয় ।
এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও সমস্যার সমাধান সহ A-Z এই পোস্টে তুলে ধরা হয়েছে
২. মিলিবাগ এর আক্রমণ :
মরিচ গাছে মিলিবাগ এর আক্রমণ হয়ে থাকে। মিলিবাগ গাছ থেকে রস চুষে খায় ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পরে, ফলন কমে যায় ।
মিলিবাগ দমন এর বিস্তারিত ও সহজ পদ্ধতি গুলো এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে৩. ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ:
এই পোকা পট বোরার নামে পরিচিত। যা ফল , কচি ডগা ছিদ্র করে খায় এবং মরিচ এর ফুলের কুঁড়ি ও খেয়ে ফেলে। তবে, মরিচ এর চেয়ে বেগুন ও শীমে এই পোকার আক্রমণ বেশি পরিলক্ষিত হয়।
জৈব বালাইনাশক প্রয়োগ: নিম তেল বা অনুমোদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করলে এই পোকা দমন হয় । তবে আক্রমণ প্রকট হলে জৈব কীটনাশক এ কাজ নাও হতে পারে ।
রাসায়নিক কীটনাশক: সাইপারমেথ্রিন বা এমামেকটিন বেনজোয়েট জাতীয় কীটনাশক প্রয়োগ করলে পট বোরার সম্পূর্ণ দমন হয় ।
৪. ছত্রাকজনিত নানা সমস্যা:
মরিচ চাষ করতে গেলে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া জনিত নানা সমস্যা দেখা দেয়। এদের মধ্যে কিছু সমস্যা মারাত্মক যার কারণে গাছ মারাও যেতে পারে । এখানে কিছু সমস্যা ও সমাধান বর্ণনা করা হলো –
ঢলে পড়া রোগ –
এটি ছত্রাকজনিত একটি মারাত্মক রোগ যার কারণে গাছ ঢলে পড়ে ধীরে ধীরে গাছ মারা যায় । প্রথমে পাতা হলুদ হয়ে, শুকিয়ে যেতে থাকে।
এর জন্য আক্রমণ হওয়ার আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে। গাছ ঢলে পড়লে সেই গাছ আর বাঁচানো সম্ভব হয় না তবে আক্রমণ এর প্রথম পর্যারে ছত্রাকনাশক (কার্বন্ডাজিম+ম্যানকোজেব) স্প্রে করলে কাজ হতে পারে ।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা –
- আক্রান্ত গাছ বাগান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে
- চারা রোপণ এর আগে শোধন করে নিতে হবে । শোধন করতে এক লিটার পানিতে ১ চা চামচ (কার্বন্ডাজিম) জাতীয় ছত্রাকনাশক মিশিয়ে সেই পানিতে চারার গোড়া ১৫-২০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে ।
- চারা রোপণ এর ৩০-৩৫ দিন পর (কার্বন্ডাজিম+ম্যানকোজেব) জাতীয় ছত্রাকনাশক ভালো করে গাছে স্প্রে করে দিতে হবে । এক লিটার পানিতে এক চা চামচ ছত্রাকনাশক পাউডার মেশাতে হবে ।
মরিচ এর এনথ্রাকনোজ,আগা মরা ও কান্ড পঁচা রোগ :
এনথ্রাকনোজ – এ রোগে আক্রান্ত কান্ড,পাতা ও ফলে বাদামি কালো দাগ দেখা যায় । আস্তে আস্তে দাগ গুলো বড় হতে থাকে এবং মরিচ পচেঁ যায়।
আগা মরা রোগ – এ রোগে প্রথমে গাছের আগা মরতে শুরু করে পরে তা কান্ড, প্রধান কান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত হতে থাকে এবং গাছ মারে যায়।
এই দুই সমস্যার জন্য (ডাইফেনোকোনাজল+প্রোপিকোনাজল) বা শুধু প্রোপিকোনাজল জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে । ১২-১৫ দিন পর পর দুই বার স্প্রে করতে হবে প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলিলিটার করে মেশাতে হবে ।
কান্ড পঁচা রোগ- কান্ড ও পত্র বৃন্তে কালো কালো দাগ দেখা যায়, দাগ গুলো আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে এবং একসময় কান্ড পচে যায় ।
এর জন্য কার্বন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক ১২-১৫ দিন পর পর দুই বার স্প্রে করে দিতে হবে ।
ছত্রাকনাশক নিয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন
৫. ফুল ঝরে পড়া :
বোরন সার এর অভাব হলে মরিচ এর প্রচুর ফুল ঝরে পরতে থাকে ।
এর জন্য সলুবোর সার প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে একবার বা দুইবার স্প্রে করতে হবে ২০-২৫ দিন পর পর ।
বারোমাসি মরিচ চাষ পদ্ধতিঃ
বিঃদ্রঃ উপরে উল্লেখিত বিস্তারিত আলোচনায় মাটি তৈরি,স্থান নির্বাচন, টব নির্বাচন, পরিচর্যা, রোগ-পোকা দমন এর মতো বিষয় গুলো বারোমাসি মরিচ চাষের ক্ষেত্রেও অনুরূপ। তবে, এর পাশাপাশি কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে বারোমাসি মরিচ চাষের ক্ষেত্রে। যা নিচে আলোচনা করা হলো-
১. জাত: বারোমাসি দুই ধরনের জাত রয়েছে – বারোমাসি স্বল্পকালীন জাত আর বারোমাসি দীর্ঘকালীন জাত । স্বল্পকালীন জাত গুলো এক মৌসুম থেকে সবোর্চ্চ এক বছর পর্যন্ত বেঁচে থেকে ফলন দেয় । বাজারে বিক্রিত বারোমাসি মরিচ বীজের বেশিরভাগ এমন জাত হয়ে থাকে। বড় আকারে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে চাষের ক্ষেত্রে এজাত গুলো বাছাই করতে হবে।
আর দীর্ঘকালীন জাত গুলো ২-৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থেকে মরিচ দিয়ে থাকে। এগুলা বসতবাড়ির আঙিনায় দেখা যায় , অনেক বড় গাছও চোখে পরে । স্থানীয়ভাবে এসব জাত – কাঠ মরিচ, বারোমাসি সাদা মরিচ, বারোমাসি কালো মরিচ, বারোমাসি সবুজ মরিচ , বারোমাসি সূর্যমুখী মরিচ নামে পরিচিত। বসতবাড়িতে সারা বছর মরিচ উৎপাদনের লক্ষ্যে এই জাত গুলোই বাছাই করতে হবে। কারণ – এগুলো আবহাওয়ার প্রতি কম সংবেদনশীল, পোকা-মাকড় এর আক্রমণ কম , সহজে পরাগায়িত হয় , মাঝারি জলাবদ্ধতা সহ্য করার ক্ষমতা রাখে,কম আলোতেও ফলন দিয়ে থাকে, ঝালের পরিমাণও বেশি হয়ে থাকে ।
২. মাটি তৈরি: টবের জন্য মাটি তৈরিতে বেলে দোঃআঁশ মাটি অথবা দোঃআঁশ মাটি নিতে হবে ৫০-৬০% + গোবর পঁচা সার বা ভার্মি কম্পোস্ট ২০-৩০% + কোকোপিট বা নদীর লাল বালু ২০% ।
উক্ত মাটি মিশ্রণে (৫ লিটার পাত্রের সমান মাটিতে) ১ চা চামচ টিএসপি (TSP) বা ডিএপি (DAP) সার + হাফ চা চামচ এমওপি (MOP) সার মেশাতে হবে ।
৩. রোদ-আলো: সবজি গুলোর মধ্যে মরিচ কম রোদেও ফলন দিয়ে থাকে। আবার দীর্ঘকালীন বারোমাসি জাতের মরিচ গুলো উজ্জ্বল আলো যুক্ত জায়গা যেখানে ২ ঘন্টার মতো রোদ পায় সে জায়গাতেও হবে । অর্থাৎ – কম রোদের বারান্দায় অনায়াসে মরিচ চাষ করা যাবে।
৪. বিশেষ পরিচর্যা: গাছের রোগাক্রান্ত, মরা ডাল-পালা নিয়মিত ছাঁটাই করে দিতে হবে। গাছের নিচের দিকে দুর্বল ডাল গুলো নিয়মিত কেটে বাদ দিতে হবে। মরিচ তুলার পর বোঁটার সাথে লেগে থাকা ডালের অগ্রভাগ কেটে দিতে হবে। এতে সহজে নতুন ডাল-পালা হবে।
মরিচ নিয়মিত উত্তোলন করতে হবে, গাছে মরিচ পাকতে দেওয়া যাবে না। কারণ- গাছে মরিচ পাকতে থাকলে নতুন করে আর ফুল আসবে না।
গাছ অনেক বিস্তৃত হয়ে থাকে এজন্য উপযুক্ত খুঁটি/সাপোর্ট এর ব্যবস্থা করে দিতে।
৫. রোগ-পোকার আক্রমণ: অন্যান্য মরিচ জাতের চেয়ে বারোমাসি দীর্ঘকালীন জাত গুলোই রোগ আক্রমণ কম । এগুলা স্বাভাবিক আবহাওয়ায় দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার জন্য অভিযোজিত তাই রোগ-পোকা কম ।
প্রধান পোকার মধ্যে জাব পোকা ও মিলিবাগ এর আক্রমণ বেশ চোখে পরে। এগুলোর দমন ব্যবস্থা সহ অন্যান্য রোগ-পোকার দমন পদ্ধতি উপরে আলোচনা করা হয়েছে
