রাসায়নিক সার পরিচিতি|অভাব জনিত লক্ষণ, প্রয়োগ বিধি ও অতিরিক্ত ব্যবহারে সৃষ্ট সমস্যা

কৃষিতে জৈব সার এর পাশাপাশি রাসায়নিক সার এর বহুল ব্যবহার রয়েছে । শুধুমাত্র জৈব সার এ চাহিদা অনুযায়ী ফসল উৎপাদন সম্ভব হয় না । আবার জৈব সার এ সময়মতো গাছ সব খাদ্য উপাদান পায় না কিন্তু রাসায়নিক সার প্রয়োগে গাছ দ্রুত খাদ্য উপাদান পায় । জৈব সার ডিকম্পোস্ট হয়ে গাছের খাদ্য উপযোগী উপাদানে পরিণত হয় । জৈব সার ধীরে ধীরে ডিকম্পোস্ট হয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গাছকে খাদ্য উপাদান সরবরাহ করে ।

সূচিপত্র –

  • রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণ 
  • পরিচিত রাসায়নিক সার, তাদের কাজ, অভাব জনিত লক্ষণ, প্রয়োগ বিধি ও অতিরিক্ত ব্যবহারে সৃষ্ট সমস্যা

      1. ইউরিয়া

      2. টিএসপি(TSP)- ট্রিপল সুপার ফসফেট 

      3. এসএসপি (SSP)- সিঙ্গেল সুপার ফসফেট 

      4. ডিএপি (DAP)- ডাই এমোনিয়াম ফসফেট 

      5. এমওপি (MOP)- মিউরেট অব পটাস 

      6. এসওপি (SOP)- সালফেট অব পটাস 

      7. ইপসম সল্ট (ম্যাগনেসিয়াম সালফেট) 

      8. জিপসাম ( সালফার+ক্যালসিয়াম ) 

      9. জিংক সালফেট 

     10. বোরন সার 

  • কিছু বিশেষ ধরনের রাসায়নিক সার

      1. এনপিকে – NPK Fertilizer

      2. এনপিকেএস – NPKS Fertilizer

      3. NPK+micronutrients 

রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণ : 

উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন ১৭ টি খাদ্য উপাদান । এর মধ্যে অতি প্রয়োজনীয় উপাদান হলো ৯ টি বাকি ৮ টি গৌণ উপাদান হিসেবে ধরা হয় । অতি প্রয়োজনীয় উপাদান গুলো হলো – কার্বন,হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম,ক্যালসিয়াম , সালফার । এর মধ্যে কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন উদ্ভিদ বাতাস ও পানি থেকে গ্রহণ করে । আর উদ্ভিদ মাটি থেকে সবচেয়ে বেশি গ্রহণ করে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম এই তিনটি উপাদান , এর পর একটু কম পরিমাণে গ্রহণ করে ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,সালফার । আর ৮ টি গৌণ উপাদান সবচেয়ে কম পরিমাণে গ্রহণ করে । 

উদ্ভিদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় উপাদান গুলো মাটিতে সবসময় পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে না । এতে নানান রকম পুষ্টি অভাব জনীত সমস্যা দেখা দেয়, ফসল উৎপাদন কমে যায় । এজন্য বাইরে থেকে এসব উপাদান রাসায়নিক সার হিসেবে প্রয়োগ করা হয় । রাসায়নিক সার হিসেবে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম সবচেয়ে বেশি প্রয়োগ করা হয় তারপর কিছুটা কম পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সালফার প্রয়োগ করা হয় ।‌ কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন এগুলো পানি ও বাতাস থেকে উদ্ভিদ পেয়ে থাকে এজন্য এগুলো সার হিসেবে প্রয়োগ করা হয় না । আর বিশেষ ক্ষেত্রে গৌণ উপাদান গুলো অণুখাদ্য হিসেবে প্রয়োগ করা হয় ।‌

পরিচিত রাসায়নিক সার, তাদের কাজ, অভাব জনিত লক্ষণ, প্রয়োগ বিধি ও অতিরিক্ত ব্যবহারে সৃষ্ট সমস্যা:

 রাসায়নিক সার ডিকম্পোস্ট হওয়ার প্রয়োজন পরে না , সরাসরি গাছের গ্রহণ উপযোগি লবণে পরিণত হয় । বিভিন্ন রকমের রাসায়নিক সার রয়েছে । এগুলোর প্রয়োগমাত্রা , প্রয়োগবিধি, গঠনে, কার্যকারিতায় ভিন্নতা রয়েছে । রাসায়নিক সার প্রয়োগে খুব দ্রুত এর সুফল পাওয়া যায় কিন্তু অতিরিক্ত ব্যবহারে মাটির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়, গাছের উপরও ক্ষতিকর প্রভাব পরে । তাই, রাসায়নিক সার প্রয়োগে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং নিয়ম মেনে পরিমিত মাত্রায় এর ব্যবহার করতে হবে ।‌ 

১. ইউরিয়া – 

সাদা রঙের দানাদার গন্ধবিহীন অতি পরিচিত একটি রাসায়নিক সার হলো ইউরিয়া । ইউরিয়ার প্রধান উপাদান নাইট্রোজেন । ফসল উৎপাদনে এর বহুল ব্যবহার রয়েছে । মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে, নাইট্রোজেন এর পরিমাণ বৃদ্ধিতে ইউরিয়া ব্যবহার করা হয় । পরিমিত মাত্রায় ব্যবহারে ফসল উৎপাদন কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায় । 

১.১ ইউরিয়া সার এর কাজ : 

 ইউরিয়ার প্রধান উপাদান নাইট্রোজেন, এতে ৪৬% নাইট্রোজেন থাকে । অর্থাৎ ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সারে ৪৬ গ্রাম নাইট্রোজেন রয়েছে ।‌ ইউরিয়া সাধারণত গোলাকার দানাদার আকারের হয়ে থাকে যা বাতাসের সংস্পর্শে সহজেই গলে যায় ।

নাইট্রোজেন পাতার ক্লোরোফিল উৎপাদন করে গাছকে গাঢ় সবুজ বর্ণ প্রদান করে । অধিক পাতা,কান্ড , ডাল-পালা উৎপাদন করতে সাহায্য করে নাইট্রোজেন। অধিক শিকড় উৎপাদন ও বিস্তারেও সাহায্য করে নাইট্রোজেন । গাছের প্রয়োজনীয় অন্যান্য পুষ্টি উপাদান পরিশোষণ বৃদ্ধি করে নাইট্রোজেন । ইউরিয়া প্রয়োগে গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় , অনেক নতুন পাতা হয়ে গাছ দ্রুত ঝোপালো হয় এজন্য পাতা জাতীয় সবজি অর্থাৎ শাক উৎপাদনে ইউরিয়া দারুন কাজ করে । ইউরিয়া প্রয়োগে গাছ দ্রুত বড় হয় , পাতার সাইজ বড় হয় ফলে গাছ বেশি খাদ্য উৎপাদন করতে পারে । আর এজন্য এর সাথে সাথে ফুল,ফল উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, ফলের আকার বড় হয় ।‌

১.২ নাইট্রোজেনের অভাবজনীত লক্ষণ : 

মাটিতে নাইট্রোজেন এর অভাব হলে গাছের ক্লোরোফিল উৎপাদন ব্যহত হয় ফলে গাছ তার স্বাভাবিক সবুজ বর্ণ ধরে রাখতে পারে না । পাতা বির্বণ হয়ে, হলুদ হয়ে অকালেই ঝরে পরে । পাতার আকার ছোট হয়ে যায় , গাছের শাখা-প্রশাখার বৃদ্ধি কমে যায়, কান্ড লম্বা ও সরু হয়ে যায় । ফুল -ফল এর আকার ছোট হয়ে আসে ফলে ফলন কমে যায় । 

১.৩ প্রয়োগ বিধি : 

ফসলের ধরণ অনুযায়ী ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয় । একেক ফসলের জন্য একেক মাত্রায় প্রয়োগ এর প্রয়োজন পরে ।‌ তবে জমিতে মাটি চাষ দেওয়ার সময় এবং টবের মাটি প্রস্তুতির সময় ইউরিয়া সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয় । পরবর্তীতে চারা বড় হওয়ার সময় অবস্থা বুঝে উপরি হিসাবে অর্থাৎ মাটির উপরে ছিটিয়ে প্রয়োগ করা হয় । এছাড়া ইউরিয়া পানিতে মিশিয়ে পাতায় স্প্রে করে ব্যবহার করা যায় । 

১.৪ অতিরিক্ত প্রয়োগে সৃষ্ট সমস্যা : 

পাতার পরিমাণ অধিক বৃদ্ধি পায়, গাছ অনেক বড় হয় কিন্তু সেই অনুযায়ী ফুল -ফল আসে না । ফুল আসতে দেরি হয় । গাছের কাণ্ড স্বাভাবিকের চেয়ে লম্বা ও নরম হয় এবং পাতা বেশি হওয়ায় গাছ সহজেই হেলে পড়ে । মাটির গুণাগুণ নষ্ট হয় অনেক উপকারী অণুজীব এর মৃত্যু ঘটে । 

২. টিএসপি -TSP ( ট্রিপল সুপার ফসফেট) : 

টিএসপি ফসফেট জাতীয় সার । এর মূল উপাদান ফসফরাস , এতে ৪৫% ফসফরাস থাকে ।‌ এছাড়াও এতে ১৩% ক্যালসিয়াম ও ১.৩% সালফার থাকে । অর্থাৎ টিএসপি প্রয়োগে উদ্ভিদ একই সাথে ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম পেয়ে থাকে ।‌

২.১ টিএসপি সারের কাজ : 

শক্তিশালী শিকড় গঠন ও বিস্তারে সহায়তা করে ফসফরাস । গাছের দৃঢ়তা প্রধান করে গাছকে নেতিয়ে পরা থেকে রক্ষা করে । সময়মত ফুল ফুটাতে, ফসল পাকাতে ও ফসলের গুণগত মান বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ফসফরাস । দ্রুত সময়ে ফল পরিপক্ক করতে সাহায্য করে ফসফরাস। 

২.২ ফসফরাসের অভাবজনীত লক্ষণ : 

গাছের শাখা-প্রশাখা বৃদ্ধি হ্রাস পায় , গাছ খর্বাকৃতি কুন্ডলীপাকানোর মতো হয়ে যায় । শিকড় এর বৃদ্ধি ও বিস্তার হ্রাস পায় এতে গাছ নির্জীব এর মতো মনে হয়। পাতার কিনারা বাদামি বর্ণ হয়ে শুকিয়ে যায় এবং বয়স্ক পাতা অকালে ঝরে পরে । ফুলের উৎপাদন, কান্ড, কুঁড়ির সংখ্যা কমে যায় এবং বৃদ্ধি হ্রাস পায় । কান্ড ও বৃন্তে গাড়ো সবুজ বা বাদামি বিবর্ণতা দেখি যায় ।‌ বেগুনি বর্ণ পুরাতন পাতার নিচের দিকেও দেখা যায় পরে তা পাতার কিনারা বরাবর এবং পরবর্তীতে পুরো পাতায় ছড়িয়ে পরে । 

২.৩ প্রয়োগ বিধি :

 টিএসপি সারের কার্যকারিতা দীর্ঘদিন মাটিতে স্থায়ী হয় । এজন্য জমির মাটি তৈরির সময় শেষ চাষে টিএসপি সার মাটিতে প্রয়োগ করতে হয় ।‌টবের জন্য মাটি তৈরির সময় সার মিশিয়ে দিতে হয় । ফসল উৎপাদনকালীন সময়ে প্রয়োজন অনুযায়ী টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হয় , এক্ষেত্রে নিড়ানি দিয়ে সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয় । 

এছাড়াও টিএসপি সার ৯৫% পানিতে দ্রবণীয় , তাই পানির সাথে মিশিয়েও গাছের পাতায় স্প্রে করে টিএসপি সার প্রয়োগ করা যায় । 

২.৪ অতিরিক্ত প্রয়োগে সৃষ্ট সমস্যা :

 ফসলের আগাম পরিপক্কতা দেখা যায় অতিরিক্ত প্রয়োগে । জিঙ্ক, আয়রন,কপার ও ম্যাঙ্গানিজ এর মতো অণুখাদ্যের অভাব দেখা দেয় অতিরিক্ত ফসফরাস প্রয়োগে । ফসলের ফল ও বীজ উৎপাদন কমে যায় বিশেষ করে বীজ উৎপাদন অনেক কমে যায় । গাছের বৃদ্ধি কমে যায় । 

৩. এসএসপি-SSP ( সিঙ্গেল সুপার ফসফেট) : 

এটিও একটি ফসফেট জাতীয় রাসায়নিক সার, এটির মূল উপাদান ফসফরাস । এর সাথে ১৮-২১% ক্যালসিয়াম , ১১-১২% সালফার থাকে । এতে ফসফরাস এর পরিমাণ ১৬-২০% । 

৩.১ SSP সারের কাজ :

 টিএসপি সারের অনুরূপ কাজ করে SSP, যা টিএসপি অংশে বর্ণনা করা হয়েছে । 

৩.২ ফসফরাসের অভাবজনীত লক্ষণ :

 টিএসপি অংশে বর্ণনা করা হয়েছে । 

৩.৩ প্রয়োগ বিধি :

 টিএসপি সারের অনুরূপ ।‌

৩.৪ অতিরিক্ত প্রয়োগে সৃষ্ট সমস্যা:

 টিএসপি সারের অনুরূপ । 

৪. ডিএপি -DAP ( ডাই এমোনিয়াম ফসফেট ) :

এটিও একটি ফসফেট জাতীয় সার এর মূল উপাদান ফসফরাস । এতে ৪৬% ফসফরাস পেন্টা অক্সাইড থাকে যা থেকে ২০% পিওর ফসফরাস পাওয়া যায় । এই সারের আর একটা সুবিধা হলো এতে ১৮% নাইট্রোজেন থাকে । এজন্য মাটিতে DAP ব্যবহার করলে ইউরিয়া সার কম ব্যবহার করতে হয় । 

৪.১ DAP সারের কাজ : 

টিএসপি সারের অনুরূপ কাজ করে DAP যা টিএসপি অংশে বর্ণনা করা হয়েছে ।

৪.২ ফসফরাসের অভাবজনীত লক্ষণ : 

টিএসপি অংশে বর্ণনা করা হয়েছে । আর ইউরিয়া অংশে নাইট্রোজেন এর অভাব জনিত লক্ষণ বর্ণনা করা হয়েছে। 

৪.৩ প্রয়োগ বিধি :

টিএসপি সারের অনুরূপ ।‌ তবে DAP ব্যবহার করলে ইউরিয়া সারের প্রয়োগ মাত্রা কমিয়ে দিতে হয় । DAP সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ফুল – ফল আসার আগ পর্যন্ত ২৫-৩০ দিন পর পর উপরি প্রয়োগ করে নিড়ানি দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায় । এছাড়া মাটি তৈরির সময় যথারিতী ব্যবহার করতে হবে । 

৪.৪ অতিরিক্ত প্রয়োগে সৃষ্ট সমস্যা :

 টিএসপি সারের অনুরূপ । যেহেতু DAP তে নাইট্রোজেনও রয়েছে তাই অতিরিক্ত ব্যবহারে অতিরিক্ত নাইট্রোজেন এর জন্য সৃষ্ট সমস্যা গুলোও দেখা দিতে পারে । 

৫. এমওপি -MOP (মিউরেট অব পটাস): 

MOP একটি পটাস জাতীয় সার যার মূল উপাদান পটাসিয়াম অক্সাইড । এতে শতকরা ৬০ ভাগ পটাসিয়াম থাকে । 

৫.১ এমওপি সারের কাজ : 

পটাস সার কান্ড শক্ত করে গাছকে দৃঢ়তা প্রধান করে, বাইরের অংশের কোষকে সুগঠিত করে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে । ফলের বর্ণ , ঘ্রাণ বৃদ্ধি করে ফলকে আকর্ষণীয় করতে সাহায্য করে ‌। উদ্ভিদের প্রোটিন উৎপাদনে সহায়তা করে । উদ্ভিদের পানি পরিশোষণ , শর্করা জাতীয় খাদ্য পরিবহনে সহায়তা করে । পানি পরিশোষণ ক্ষমতা ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে গাছকে স্বল্পকালীন খরায় নেতিয়ে পরা থেকে রক্ষা করে । 

৫.২ পটাসিয়াম এর অভাবজনিত লক্ষণ : 

পাতা হলুদ হয়ে যায় যা বয়ষ্ক পাতার কিনারা থেকে শুরু হয়। এর পরে এ থেকে আগা মরা রোগের প্রকোপ দেখা যায় । পাতার প্রধান শিরা সমূহ গাঢ় সবুজ থাকে এবং আন্তঃশিরায় বাদামি বর্ণের টিস্যু দেখা যায়। পাতার উপরিভাগ কুঞ্চিত হয়ে অর্থাৎ পাতা কোঁকড়িয়ে ছোট হয়ে যায়, অকালে ঝরে পরে । গাছের বৃদ্ধি কমে খর্বাকৃতির আকার ধারণ করে এবং গাছের ছোট আন্তঃপর্বসমূহের বৃদ্ধি কমে যায়। গাছে পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ বেড়ে যায়।

৫.৩ প্রয়োগবিধি : 

ইউরিয়া, টিএসপি/ডিএপির মতো এমওপি সারও মাটি তৈরির সময় মিশিয়ে দিতে হয় । মূলত এই তিনটি রাসায়নিক সার জমি তৈরির সময় শেষ চাষের সময় মিশিয়ে নিতে হয় । টবের মাটি প্রস্তুতিতেও একই ভাবে এই তিনটি সার মিশিয়ে নিলে ভালো তবে সব গাছের ক্ষেত্রে না । পটাস সার পরর্বতীতে উপরি প্রয়োগের প্রয়োজন পরে না একবার প্রয়োগে দীর্ঘ দিন কার্যকারিতা থাকে । তবে অভাব জনিত লক্ষণ দেখা দিলে পটাস সার প্রয়োগ করতে হবে ।

পটাস সার পানিতে সহজে দ্রবণীয় হয় তাই এটি পানির সাথে মিশিয়ে পাতায় স্প্রে করে প্রয়োগ করা যায়। 

৫.৪ অতিরিক্ত প্রয়োগে সৃষ্ট সমস্যা: 

এমওপি সার তৈরিতে পটাসিয়াম ক্লোরাইড ব্যবহার করা হয় । এই ক্লোরাইড আয়ন এর জন্য বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয় । অতিরিক্ত ক্লোরাইড পাতার ক্লোরোফিল উৎপাদনে ব্যাগাত ঘটায় ফলে পাতা হলুদ হয়ে যায় , ফলের গুণগত মান কমে যায় ।‌

মাটিতে পটাস সার প্রয়োগের পরিমাণ বেশি হলে গাছের ক্যালসিয়াম ও বোরনের শোষণ হার কমে যায়। ফলে বোরন ও ক্যালসিয়াম এর অভাবজনিত লক্ষণ দেখা যায়। গাছের বৃদ্ধি অস্বাভাবিকভাবে কমে যায় ।

৬. এসওপি -SOP (সালফেট অব পটাস): 

এটি একটি পটাস জাতীয় রাসায়নিক সার। এর মূল উপাদান পটাসিয়াম যা ৫০% হারে থাকে এবং এর সাথে সালফারও রয়েছে যার পরিমাণ ১৮% । 

৬.১ এসওপি সার এর কাজ : 

 SOP সার MOP এর অনুরূপ কাজ করে তবে এর মধ্যে সালফার থাকায় বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায় । সালফার এর অভাব পূরণ হয় SOP প্রয়োগ করলে । SOP  তৈরিতে ক্লোরাইড এর যৌগ ব্যবহার করা হয় না যেখানে MOP তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ‌। যেসব উদ্ভিদ ক্লোরাইড সংবেদনশীল অর্থাৎ লবণ সংবেদনশীল সেক্ষেত্রে SOP ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় । এছাড়া SOP সহজে 100% পানিতে দ্রবণীয় হওয়ায় লিকুইড সার হিসেবে পাতায় স্প্রে করে ব্যবহার করা যায় ।‌

৬.২ পটাসিয়াম এর অভাবজনিত লক্ষণ :  

পটাসিয়াম এর অভাবজনিত লক্ষণ MOP অংশে বর্ণনা করা হয়েছে । 

৬.৩ প্রয়োগ বিধি : 

MOP  সারের অনুরূপ ।‌‌ তবে SOP পানিতে ১০০% দ্রবণীয় হওয়ায় এটি পানিতে মিশিয়ে পাতায় বা জমিতে স্প্রে করে প্রয়োগ করা যায় । এক্ষেত্রে প্রতি লিটার পানিতে ৫-১০ গ্রাম SOP মিশাতে হবে । 

৬.৪ অতিরিক্ত প্রয়োগে সৃষ্ট সমস্যা : 

MOP সারের অনুরূপ । তবে এক্ষেত্রে ক্লোরাইড এর সমস্যা গুলো দেখা যায় না যেহেতু SOP তে ক্লোরাইড থাকে না। 

৭. ইপসম সল্ট – (ম্যাগনেসিয়াম সালফেট): 

ইপসম সল্ট কে রাসায়নিক সার বললে ভুল হবে । এটি কোন সার নয় , ইপসম সল্টে উদ্ভিদের বৃদ্ধি সহায়ক দুইটি উপাদান থাকে তাই এটি ব্যবহার করা হয় । এতে ম্যাগনেসিয়াম থাকে ১০% আর সালফার থাকে ১৩% । ম্যাগনেসিয়াম ও সালফার উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান । তবে এগুলোর উদ্ভিদ কর্তৃক গ্রহণ মাত্রা কম ও অভাব জনিত লক্ষণ তেমন পরিলক্ষিত হয় না । অর্থাৎ ইপসম সল্ট উদ্ভিদের প্রধান কোন খাদ্য উপাদান হিসেবে কাজ করে না, এটা অনুখাদ্য হিসেবে কাজ করে। আবার পরিমিত মাত্রায় মাটিতে জৈব সার ব্যবহার করলে ইপসম সল্ট প্রয়োগের প্রয়োজন পরে না। 

৭.১ ইপসম সল্ট এর কাজ : 

গাছের শিকড় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, পাতা কুঁকড়ে যাওয়া রোধ করে । পাতায় ক্লোরোফিল এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে পাতাকে গাঢ় সবুজ করে তুলে । ইপসম সল্ট উদ্ভিদের গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান নাইট্রোজেন ও ফসফরাস এর শোষণ মাত্রা বৃদ্ধি করে ।  কান্ড-পাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করে গাছকে ঝোপালো আকার দেয় ।

৭.২ ম্যাগনেসিয়াম ও সালফার এর অভাব জনিত লক্ষণ : 

সালফার এর অভাবে গাছের সমস্ত পাতা হলুদ বর্ণের হয়ে যায় ।‌ আর ম্যাগনেসিয়াম এর অভাবে গাছের নিচের দিকের পাতাগুলো শিরা ব্যতিত অন্য অংশ গুলো হলুদ হয়ে যায় ।‌ 

৭.৩ প্রয়োগ বিধি : 

ইপসম সল্ট ব্যবহারের আগে মাটি পরীক্ষা করা জরুরি, যদি মাটিতে ইপসম সল্ট এর ঘাটতি থাকে তাহলেই কেবল ইপসম সল্ট প্রয়োগ করা উচিত । কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাটিতে যে পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম ও সালফার এর উপস্থিতি থাকে তা উদ্ভিদের জন্য যথেষ্ট ।

  ইপসম সল্ট মাটির সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায় । এছাড়া ইপসম সল্ট পানিতে দ্রবীভূত হয় । এক চা চামচ ইপসম সল্ট ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে পাতায় স্প্রে করে প্রয়োগ করতে হবে । এছাড়াও ইপসম সল্ট মাটির উপরে ছিটিয়ে দিয়ে হালকা পানি সেচ দিলে তা পানির সাথে মিশে পুরো মাটিতে ছড়িয়ে যাবে । 

৭.৪ অতিরিক্ত প্রয়োগে সৃষ্ট সমস্যা: 

ভালো মানের মাটি ব্যবহার করলে অর্থাৎ বেশি পরিমাণ জৈব সার ব্যবহার করলে ইপসম সল্ট প্রয়োগ এর প্রয়োজন পরে না । ম্যাগনেসিয়াম ও সালফার গাছের জন্য খুবই অল্প পরিমাণে লাগে তাই ইপসম সল্ট ব্যবহারের আগে আপনার বাগানের মাটি পরীক্ষা করে নিবেন যে আসলেই এটি প্রয়োজন কিনা । শীম জাতীয় গাছের জন্য ম্যাগনেসিয়াম খুব একটা প্রয়োজন পরে না আবার টমেটো, মরিচ, গোলাপ গাছের জন্য ম্যাগনেসিয়াম অধিক পরিমাণে লাগে । পরিমিত মাত্রায় ইপসম সল্ট ব্যবহারে কোনো সমস্যা হবে না,  কিন্তু একটানা দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত ইপসম সল্ট ব্যবহারে বিভিন্ন রকম সমস্যা হতে পারে । আবার ইপসম সল্ট সহজে পানিতে দ্রবণীয় হওয়ায় এটি বৃষ্টির পানির সাথে মিশে সহজে জলাশয়ের পানির সাথে মিশে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে যা জলজ পরিবেশের ক্ষতি সাধন করতে পারে । 

৮. জিপসাম :

জিপসাম সাদা বা ধূসর রঙের পাউডারের মতো এক ধরনের রাসায়নিক সার । এতে ১৭% সালাফার বা গন্ধক আর ২৩% ক্যালসিয়াম থাকে । অর্থাৎ জিপসাম একই সাথে সালফার ও ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি পূরণ করে ।‌

৮.১ জিপসাম এর কাজ : 

জিপসাম গাছের প্রোটিন উৎপাদনে সহায়তা করে। তেল উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পাতার ক্লোরোফিল উৎপাদন বৃদ্ধি করে গাছের বর্ণ সবুজ রাখতে সহায়তা করে। তেল ও বীজ উৎপাদন এবং হরমোন এর কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । 

৮.২ জিপসামের অভাব জনিত লক্ষণ : 

জিপসামের অভাবে গাছের সবুজ বর্ণ অর্থাৎ ক্লোরোফিল কমে যায়,  কান্ড চিকন হয়ে যায়। প্রথমে কচি পাতা হলদে হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে পুরাতন পাতাও হলুদ,বিবর্ণ হয়ে যায় । গাছের বৃদ্ধি কমে গাছ খাটো হয়ে যায় । ফল পরিপক্ক হতে সময় বেশি লাগে ও ফলন হ্রাস পায় । 

৮.৩ প্রয়োগ বিধি : 

মাটি তৈরির সময় শেষ চাষে ছিটিয়ে দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয় । শাক-সবজি, সকল প্রকার ফুল-ফলে এটি পরিমিত মাত্রায় প্রয়োগ করে ফলন বৃদ্ধি করা সম্ভব । ফসল উৎপাদনকালীন সময়ে সালফার ও ক্যালসিয়াম এর অভাবজনিত লক্ষণ দেখা দিলে জিপসাম উপরি প্রয়োগ করে নিড়ানি দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে ‌। 

৮.৪ অতিরিক্ত প্রয়োগে সৃষ্ট সমস্যা :

 অতিরিক্ত ব্যবহারে গাছের শিকড় এর বৃদ্ধি কমে যায় ফলে গাছের জীবনীশক্তি কমে যায় । 

৯. জিংক সালফেট :

জিংক বা দস্তা সার তিন ধরনের, 

মনোহাইড্রেট জিংক সালফেট – এতে ৩৬% দস্তা আর ১৮% সালফার থাকে । 

হেপ্টা হাইড্রেট জিংক সালফেট – এতে ২৩% দস্তা আর ১১% সালফার থাকে ।‌

চিলেটেড জিংক – এতে ১০% দস্তা থাকে ।‌

৯.১ দস্তা সারের কাজ : 

দস্তা গাছে বিভিন্ন ধরনের হরমোন তৈরিতে কাজে লাগে । ক্লোরোফিল উৎপাদনে সহায়তা করে থাকে । শিম জাতীয় ফসলের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ফলন বৃদ্ধি করে থাকে দস্তা সার ।

৯.২ অভাব জনিত লক্ষণ :

 গাছের পাতায় তামাটে বা দাগ আকারে বিবর্ণতা দেখা যায় । পাতা ছোট হয়ে যায় এবং নতুন পাতার গোড়ার দিক থেকে বিবর্ণতা দেখা যায়। বিশেষ করে আন্তঃশিরায় বিবর্ণতা বেশি দেখা যায়। পাতার আকৃতি ছোট হতে থাকে ক্রমান্বয়ে ছোট আকারের গুচ্ছ পাতা তৈরি হয় যা রোসেটিংনামে পরিচিত । 

৯.৩ প্রয়োগ বিধি :

 দস্তা সার মাটির সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করা হয় ।‌ কোন কোন ফসলে এটি পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করে প্রয়োগ করা হয় । দস্তা সহজে পানিতে দ্রবণীয় হয় । এছাড়া চিলেটেড জিংক সার সাধারণত পানিতে দ্রবণীয় করে গাছে স্প্রে করে প্রয়োগ করতে হয় । পাতা ও সবজি জাতীয় ফসল, ফল গাছে জিংক সার পাতায় প্রয়োগ করা হয় । সেক্ষেত্রে  প্রতিলিটার পানিতে ৩-৪ গ্রাম জিংক সালফেট হেপ্টাহাইড্রেট বা চিলেটেড জিংক দ্রবীভূত করে পাতায় স্প্রে  করে দিতে হবে ।

৯.৪ প্রয়োগে সতর্কতা :

 জিংক সার ফসফেট জাতীয় (টিএসপি, এসএসপি ও ডিএপি) এবং কম্পোস্ট সারের সাথে মিশ্রিত করা যাবে না ।‌ প্রথর রোদে পাতায় স্প্রে করা যাবে না , পড়ন্ত বিকেলে স্প্রে করলে সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় । 

৯.৫ অতিরিক্ত প্রয়োগে সৃষ্ট সমস্যা : 

জমিতে দস্তার পরিমাণ বেশি হলে গাছে বিষক্রিয়ার  সৃষ্টি হয়। তাছাড়া অতিরিক্ত দস্তা প্রয়োগে গাছের আমিষ উৎপাদন ব্যাহত হয় । 

১০. বোরন সার :

বোরন সার হিসেবে বরিক এসিড বা সলুবোর প্রয়োগ করা হয় । বরিক এসিডে ১৭% আর সলুবোর এ ২০% বোরন থাকে । 

১০.১ বোরন এর কাজ :

গাছের কোষ বৃদ্ধিতে এবং  পাতা ও ফুলের রং আকর্ষণীয় করতে সাহায্য করে । বীজ উৎপাদনে সাহায্য করে এবং ফলের চিটা হওয়া রোধ করে ।

ফুলের পরাগায়ন ও নিষিক্তকরণে সহায়তা করে এবং ফলের ফেটে যাওয়া ,ফল বিকৃতি হওয়া রোধ করে । গাছের কোষপ্রাচীর শক্ত করে, শিকড় ও ডগার বৃদ্ধি ঘটায় । শিম,ডাল জাতীয় দানাদার ফলের দানার গঠনে এবং ফলন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । 

১০.২ অভাব জনিত লক্ষণ : 

গাছের বৃদ্ধি কমে যায়, সবজি বা ফল গাছের ফুল ঝরা বেড়ে যায় ‌। গাছের কান্ডের শীর্ষভাগ মরে যায়, কাণ্ড কালো বর্ণ ধারণ করে শুকিয়ে যায় । ফল আকারে ছোট হয় এবং ফেটে যায় । পেঁপে, কাঁঠাল, পেয়ারা ইত্যাদি ফল বিকৃত হয়ে অপরিপক্ক অবস্থায় ঝরে যায় । গাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি সেচ দেওয়ার পরও অনেক সময় কচিপাতা নেতিয়ে পড়া অবস্থায় থাকে । 

১০.৩ প্রয়োগ বিধি : 

ফল গাছে ফুল আসার আগে মাটির সাথে নিড়ানি দিয়ে মিশিয়ে দিতে হবে । এতে ফল ঝরা , ফল ফাটা , ফল বিকৃত হওয়া রোধ হবে । 

ফল থাকা অবস্থায় পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করে দিলেও ভালো ফলাফল পাওয়া যায় । প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে একবার বা দুইবার স্প্রে করতে হবে ২০-২৫ দিন পর পর । 

১০.৪ অতিরিক্ত প্রয়োগে সৃষ্ট সমস্যা : 

বোরনের প্রয়োগ মাত্রা বেশি হলে কচি পাতা এবং কান্ড নষ্ট হয়ে যায় এতে ফলন অনেক কমে যায় ।

কিছু বিশেষ ধরনের রাসায়নিক সার :  

১. এনপিকে – NPK Fertilizer : 

NPK একটি মিশ্র রাসায়নিক সার । এটি কোন রকম রাসায়নিক বিক্রিয়া না ঘটিয়ে ভৌত উপায়ে কিছু সারের পরিমাণ মতো মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করা হয় । এতে N- নাইট্রোজেন, P- ফসফরাস, K – পটাসিয়াম থাকে বিভিন্ন মাত্রায় । ভিন্ন ভিন্ন অনুপাতে বা সমান অনুপাতের NPK তৈরি করা হয় । সমান অনুপাতের NPK যেমন‌- NPK (20:20:20) , NPK (19:19:19) , NPK(33:33:33) ,  আবার ভিন্ন ভিন্ন অনুপাতের যেমন – NPK ( 8:18:36) , NPK (30:20:20),NPK ( 12:32:16) ইত্যাদি বিভিন্ন NPK পাওয়া যায় । 

NPK কেনো ব্যবহার করা হয় : 

এমনিতে যদি 100 গ্রাম করে ইউরিয়া , টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) , MOP(মিউরেট অব পটাস) সার  গাছে ব্যবহার করা হয় তাহলে গাছ 46 গ্রাম নাইট্রোজেন , 45 গ্রাম ফসফরাস , 60 গ্রাম পটাসিয়াম পাবে । কারণ – ইউরিয়াতে 46% নাইট্রোজেন থাকে, টিএসপিতে(TSP) 45% ফসফরাস থাকে এবং MOP তে পটাসিয়াম থাকে 60% । অর্থাৎ এতে NPK অনুপাত দাঁড়ালো 46:45:60 ।

কিন্তু এমন অনুপাতে NPK(46:45:60) এর চেয়ে ব্যালেন্স NPK যেমন- NPK (19:19:19),NPK (20:20:20), NPK (33:33:33) বা নির্দিষ্ট অনুপাতের NPK সার গাছে প্রয়োগ এ ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এজন্যই মূলত বিভিন্ন গাছের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনুপাতের NPK মিশ্র সার ব্যবহার করা হয় । 

নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট অনুপাতের NPK সার প্রয়োগ করে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় । কারণ বছরের সব সময় গাছের খাদ্য চাহিদা এক রকম থাকে না আবার ফুল-ফল দেওয়ার সময় খাদ্য চাহিদা ভিন্ন হয় । এজন্য গাছের অবস্থা ও সময় বুঝে NPK সার প্রয়োগে দারুন ফলাফল পাওয়া যায় । 

NPK Fertilizers বাড়িতে তৈরি সম্ভব – 

নির্দিষ্ট পরিমাণে ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি সার মিশিয়ে যেকোন অনুপাতের NPK সার তৈরি সম্ভব ।

প্রয়োগ বিধি : 

NPK Fertilizer সাধারণত পাউডার হিসেবে পাওয়া যায় । পাউডার পানির সাথে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করে ব্যবহার করা হয়। NPK সার পানিতে ১০০% দ্রবীভূত হয় । সকালের মিষ্টি রোদে NPK স্প্রে করা হয় , প্রখর রোদে স্প্রে করা যাবে না । 

২.এনপিকেএস- NPKS Fertilizer : 

NPK সারে তিনটি উপাদান থাকে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম আর NPKS এ তিনটি ছাড়াও  আরও একটি বাড়তি উপাদান থাকে তা হলো সালফার । NPKS এ সালফার থাকায় এর প্রয়োগে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায় । বিভিন্ন অনুপাতের NPKS পাওয়া যায় । 

প্রয়োগ বিধি :

NPKS রাসায়নিক সার সাধারণত দানাদার আকারে পাওয়া যায় । এটি মাটির উপরে ছিটিয়ে উপরি প্রয়োগ করে নিড়ানি দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয় । 

৩. NPK+Micronutrients : 

প্রধান তিনটি উপাদান নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম ছাড়াও এর সাথে উদ্ভিদের গৌণ খাদ্য উপাদান যেমন- বোরন,দস্তা,তামার মতো উপাদানে তৈরি NPK+Micronutrients. এই ধরনের মিশ্র সারে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় ১৭ টি উপাদানের ১০-১২ টি উপাদান বিদ্যমান থাকে । অর্থাৎ সকল খাদ্য উপাদান এক সাথে থাকে । সাধারণত সৌখিন ফসল চাষাবাদে এই ধরনের সার ব্যবহার করা হয় কারণ – এগুলোর দাম অত্যধিক । 

সাধারণত NPK+micronutrients দুই ধরনের হয় – 

এগুলো একই সাথে রাসায়নিক সার ও অণুখাদ্যের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়। 

৩.১ পাউডার জাতীয় NPK+micronutrients : 

এটি পানিতে দ্রবীভূত হয় তাই, পানির সাথে মিশিয়ে পাতায় স্প্রে করে প্রয়োগ করা হয় । ক্যাকটাস-সাকুলেন্ট, অর্কিড জাতীয় সৌখিন চাষাবাদে এটি ব্যবহার করা হয়। 

এছাড়াও হাইড্রোপনিক সলিউশন তৈরিতে, সেমি হাইড্রোপনিক চাষাবাদে বহুল ব্যবহৃত হয় এটি । 

৩.২ দানাদার NPK+micronutrients -(অসমোকট) : 

এটি অসমোকট নামে পরিচিত । এটার বিশেষ গুণ হলো স্ল রিলিজ অর্থাৎ সার উপাদান ধীরে ধীরে রিলিজ হয় । এটি ক্যাকটাস-সাকুলেন্ট, অর্কিড এর মিডিয়ায় ব্যবহার করা হয় । এটি ৩-৬ মাস পর্যন্ত স্থায়ি হয়ে ধীরে ধীরে মিডিয়ায় খাদ্য উপাদান সরবরাহ করে । এই স্ল রিলিজ হওয়ার জন্য এটিকে বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয় । অসমোকট মিডিয়ার সাথে মিশিয়ে দিয়ে বা মিডিয়ার উপর ছিটিয়ে দিয়ে প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া অসমোকট এর জন্য mini fertilizer box পাওয়া যায় , সেটাতে কিছু পরিমাণ অসমোকট ভরে টবের এক পাশে রেখে দেওয়া হয় । 

এই ধরনের রাসায়নিক সার গুলোর দাম অত্যধিক তাই সাধারণত সৌখিন চাষাবাদে এটি ব্যবহার করা হয়

Leave a Reply