১৫ ধরনের সবজির, কৃত্রিম পরাগায়ন পদ্ধতি

প্রাকৃতিক ভাবেই বেশিরভাগ সবজি গাছের ফুলের পরাগায়ন পোকা-মাকড়,বাতাস দ্বারা হয়ে থাকে। কিন্তু, অনেক সময় এসব পোকা-মাকড়ের অভাবে বিশেষ করে শহরে উঁচু বিল্ডিং এর ছাদ বাগানে মৌমাছি বা এজাতীয় পোকার আনাগোনা কম থাকায় সবজির প্রাকৃতিক পরাগায়ন কার্য সংগঠিত হয় না । তখন কৃত্রিম পরাগায়নের প্রয়োজন হয় এছাড়াও এর মাধ্যমে সবজির উৎপাদন অনেকটা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

সূচিপত্র – 

  • পরাগায়ন ও তার প্রকারভেদ 
  • কৃত্রিম পরাগায়নের প্রয়োজনীয়তা 
  • সবজির কৃত্রিম পরাগায়ন পদ্ধতি 
  • ১৫ টি সবজির ফুল ফুটার সময় ও কৃত্রিম পরাগায়ন প্রক্রিয়া 

১. লাউ 

২. মিষ্টি কুমড়া 

৩. শসা

৪. করলা

৫. তরমুজ 

৬. রকমেলন বা খরমুজ বা ফুটি

৭. পটল 

৮. ঝিঙা 

৯. চিচিঙ্গা

১০. কাঁকড়োল

১১. চাল কুমড়া 

১২. স্কোয়াশ 

মরিচ,বেগুন,টমেটো 

  • সবজির কৃত্রিম পরাগায়ন (চার্ট আকারে)

পরাগায়ন ও তার প্রকারভেদঃ 

পরাগায়ন এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ফুলের পরাগধানী থেকে উৎপন্ন পরাগরেণু সেই ফুল বা অন্য ফুলের অথবা ঐ প্রজাতির অন্য কোনো উদ্ভিদের ফুলের গর্ভমুন্ডে পতিত হয়। অর্থাৎ, এটি উদ্ভিদের প্রজনন প্রক্রিয়ার একটি অংশ এবং ফল ও বীজ সঠিক ভাবে সৃষ্টি হওয়ার পূর্বশর্ত ।

এটি প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে – 

১. প্রাকৃতিক পরাগায়ন

২. কৃত্রিম পরাগায়ন 

প্রকৃতিতে অধিকাংশ গাছে প্রাকৃতিক বিভিন্ন মাধ্যম দ্বারা পরাগায়ন হয়ে থাকে। যেমন- বাতাস,মৌমাছি,পোকা-মাকড়, প্রজাপতি,পাখি , প্রাণি ,ইত্যাদি । এটাই প্রাকৃতিক পরাগায়ন প্রক্রিয়া।

আবার, অনেক সময় হাত পরাগায়ন (Hand pollination) বা অন্য কোন কৃত্রিম উপায়ে পরাগায়ন সংগঠিত করা হয়, যাকে কৃত্রিম পরাগায়ন বলা হয়। 

কৃত্রিম পরাগায়নের প্রয়োজনীয়তাঃ

গাছের স্বাস্থ্য ঠিক থাকা ও মাটি সঠিক ভাবে তৈরি করার পরও অনেক সময় কুমড়া, লাউ জাতীয় সবজির ফল একদম ছোট অবস্থায় হলুদ হয়ে ঝরে পরে যায়। এর একটি কারণ হলো – প্রাকৃতিক মাধ্যমের অভাবে পরাগায়ন প্রক্রিয়া সঠিক ভাবে সংগঠিত না হওয়া । এতে ফসলের উৎপাদন হ্রাস পায়, বিশেষ করে কুমড়া জাতীয় ফসলে এই সমস্যা হলে উৎপাদন ব্যাপক হারে হ্রাস পায়। কুমড়া জাতীয় গাছে পুরুষ ফুল ও স্ত্রী ফুল আলাদা হয়ে থাকে আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পোকা,ভ্রমর, মৌমাছি দ্বারা পরাগায়ন হয়ে থাকে। ফসলের মাঠে অধিক কীটনাশক প্রয়োগে এসব সাহায্যকারি পোকার সংখ্যা হ্রাস পায় আবার শহুরে অঞ্চলের উঁচু বিল্ডিং এর ছাদ বাগানে এসব পোকা এমনিতেই কম থাকে। এজন্য ছাদ বাগানের ক্ষেত্রে কৃত্রিম পরাগায়ন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এতে সফলতার হার বেশি তথা ফসলের উৎপাদন অনেকটা বৃদ্ধি পায়। আবার ছাদ বাগানে গাছের সংখ্যা কম থাকে, গাছ হাতের নাগালে থাকে এজন্য কৃত্রিম পরাগায়ন অনেক সহজ হয় । 

সবজির কৃত্রিম পরাগায়ন পদ্ধতিঃ

হাত পরাগায়ন পদ্ধতি গুলো – 

পদ্ধতি -১ : 

পুরুষ ফুল ছিঁড়ে নিয়ে তার পাপড়ি গুলো বাদ দিতে হবে। তারপর ফুলের পরাগধানীর পরাগরেণু স্ত্রী ফুলের গর্ভমুন্ডে আলতো করে ঘসে লাগিয়ে দিতে হবে। বড় ফুল হয় এমন সবজির ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি উপযোগী, যেমন- লাউ, মিষ্টি কুমড়া,চাল কুমড়া,স্কোয়াশ,পটল, ঝিঙা । 

পদ্ধতি – ২ : 

পুরুষ ফুল এর পরাগধানীতে রং তুলির ছোট ব্রাশ বা কটন বাড দিয়ে আলতো করে ঘসে যথেষ্ট পরাগরেণু মাখিয়ে নিতে হবে। তারপর স্ত্রী ফুলের গর্ভমুন্ডে পরাগরেণু আলতো করে ঘসে লাগিয়ে দিতে হবে। ছোট সাইজের ফুল হয় এমন সবজিতে এই পদ্ধতি অব্যষই অবলম্বন করতে হবে। যেমন – শসা,করলা, চিচিঙ্গা, তরমুজ । এছাড়াও বড় ফুলের সবজিতেও এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে । 

পদ্ধতি -৩ : 

এটা উভলিঙ্গ ফুল হয় এমন সবজির ক্ষেত্রে উপযোগী। এক্ষেত্রে রং তুলির ছোট ব্রাশ বা কটন বাড ব্যবহার করতে হবে। ফুল গুলোর মধ্য অংশে চারপাশে অনেক গুলো সমান লম্বা পুংকেশর দ্বারা বেষ্টিত অপেক্ষাকৃত লম্বা একটি গর্ভদন্ড দেখা যায়। এক্ষেত্রে ব্রাশ বা বাড দিয়ে ফুলের পুংকেশর এর চারপাশে কয়েকবার ঘুরিয়ে পরাগরেণু মাখিয়ে তা আবার স্ত্রী স্তবক এর অংশে আলতো করে ঘষে লাগিয়ে দিতে হবে। মরিচ, বেগুন ও টমেটোর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। 

পরাগায়ন সংশ্লিষ্ট কিছু কথা- 

১. কুমড়া জাতীয় ফসলে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল আলাদা হয়ে থাকে। তাই, প্রথমেই পুরুষ ফুল ও স্ত্রী ফুল চিনতে হবে। যেসব ফুলের বোঁটার দিকে ছোট ফলের মতো একটি আকৃতি থাকে সেগুলো স্ত্রী ফুল । 

আর ফুলের বোঁটায় কোন ফলের মতো গঠন না থাকলে তা পুরুষ ফুল।

২. কোন সবজির ফুল কোন সময় ফুটে ও কতক্ষণ পর্যন্ত তাজা থাকে তা আগে থেকে জানতে হবে । অর্থাৎ, নির্দিষ্ট সবজির ফুল কখন ফুটে ও কোন সময় পরাগায়ন করতে হবে তা জানা থাকতে হবে ।

আরেক টা বিষয় লক্ষণীয় – ফুল ফুটে থাকার সময়,তাজা থাকার সময়কাল বা পরাগধানী,গর্ভমুন্ড সক্রিয় থাকার সময়কাল আবহাওয়া, রোদ ও তাপের উপর অনেক ক্ষেত্রে নির্ভরশীল। যেমন- তাপমাত্রা বেশি থাকলে ফুল স্বাভাবিক সময়ের আগেই বুজে যেতে থাকে, আবার তাপ-রোদ কম থাকলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি সময় ধরে ফুল ফুটে থাকতে দেখা যায়। 

৩. পরাগায়নের ক্ষেত্রে একই দিনে ফুটা পুরুষ ফুল ও স্ত্রী ফুল বাছাই করতে হবে। আর পুরুষ ফুল সাধারণত সদ্য ফুটা হলে ফলাফল ভালো হয় । পুরুষ ফুল তুলার পর সাথে সাথে পরাগায়ন করতে হবে । কোন ক্ষেত্রে যদি দূর থেকে পুরুষ ফুল সংগ্রহ করার প্রয়োজন হয় তাহলে পাপড়িসহ অর্ধফুটা ফুল সংগ্রহ করে পলিথিন ব্যাগে পরিবহন করতে হবে। আর যত দ্রুত সম্ভব পরাগায়ন কাজ সম্পন্ন করতে হবে। 

৪. একাধিক পুরুষ ফুল দিয়ে বা একাধিক পুরুষ ফুল থেকে পুংকেশর সংগ্রহ করে স্ত্রী ফুলে পরাগায়ন করলে সাকসেস রেট বেশি হয়‌‌ । এর মানে এই নয় যে, একাধিক পুরুষ ফুল দিয়ে মাত্র একটি স্ত্রী ফুল পরাগায়ন করা যাবে। এই একাধিক পুরুষ ফুল এর পুংকেশর দিয়ে যথারিতী অন্য স্ত্রী ফুলও পরাগায়ন করা যাবে যা, সবজিভেদে ৭-১০ টি স্ত্রী ফুল পর্যন্ত হতে পারে।

৫. পুরুষ ফুল এর পাপড়ি বাদ দেওয়া, ব্রাশ ঘসে পরাগরেণু নেওয়া, পরাগরেণু স্থাপন এসব কাজ সাবধানতার সাথে ধীরে ধীরে করতে হবে। আবার , পরাগরেণু স্থাপন এর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেনো স্ত্রী ফুল কোনভাবে নষ্ট হয়ে না যায়। 

১৫ টি সবজির ফুল ফুটার সময় ও কৃত্রিম পরাগায়ন প্রক্রিয়া (বিস্তারিত): 

এখানে কুমড়া,লাউ জাতীয় ১২ টি সবজির আলাদা আলাদা বর্ণনা আর মরিচ, বেগুন, টমেটো এই ৩ টির বর্ণনা একসাথে দেওয়া হয়েছে। সবজির নামের পাশে ব্যাকেট এ উপযুক্ত পরাগায়ন পদ্ধতির নাম লেখা রয়েছে। আর পদ্ধতি -১,২,৩ সম্পর্কে পূর্ববর্তী অংশে আলোচনা করা হয়েছে। 

১. লাউ (পদ্ধতি-১,২):

লাউ এর স্ত্রী ফুল দুপুর থেকে ফুটা আরম্ভ হয়ে রাত ৭-৮ টার মধ্যে পুরোপুরি প্রস্ফুটিত হয় । আর পুরুষ ফুল এর পরাগধানী থেকে পরাগরেণু দুপুর বেলা থেকে উন্মুক্ত হতে থাকে। এজন্য কৃত্রিম পরাগায়নের উপযুক্ত সময় হলো বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এছাড়া ভোর বেলাও করা যাবে । এতে যদিও সাকসেস রেট কম । 

একটি পুরুষ ফুল দ্বারা ৬-৭ টি স্ত্রী ফুলের পরাগায়ন সম্পন্ন করা যাবে । 

২. মিষ্টি কুমড়া (পদ্ধতি-১,২): 

খুব ভোর থেকে ফুল ফুটা আরম্ভ হয় মিষ্টি কুমড়ার, আর দিনের আলো ও রোদ বৃদ্ধি পাওয়ায় সাথে সাথে ফুল বুজে যেতে থাকে। এজন্য মিষ্টি কুমড়ার কৃত্রিম পরাগায়ন সকাল ৮ টার মধ্যে সম্পন্ন করা উত্তম হবে, তবে সকাল ৯ টার মধ্যে অব্যষই করতে হবে। 

সাধারণত একটি পুরুষ ফুল ৪-৫ টি স্ত্রী ফুলের পরাগায়নে ব্যবহার করা যায়। 

৩. শসা (পদ্ধতি-২): 

শসার পুরুষ ফুল সকাল বেলা ফুটে ও দুপুর পর্যন্ত সবোর্চ্চ সক্রিয় অবস্থায় থাকে। স্ত্রী ফুলও সকাল বেলা ফুটে এজন্য শসার কৃত্রিম পরাগায়ন দুপুরের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। তবে স্ত্রী ফুল ফুটার ২ ঘন্টার মধ্যে পরাগায়ন করতে পারলে সাকসেস রেট বেশি হবে। 

৪. করলা (পদ্ধতি-২): 

খুব ভোর বেলা থেকে করলার ফুল ফুটা আরম্ভ হয়ে সকালের মধ্যে সম্পূর্ণ রুপে প্রস্ফুটিত হয়ে যায়। পুরুষ ফুলের পরাগধানী সকাল বেলায় খুব সক্রিয় থাকে । তাই করলার পরাগায়ন প্রক্রিয়া সকাল ৯ টার মধ্যেই সম্পন্ন করতে হয়। 

৫. তরমুজ (পদ্ধতি-২): 

তরমুজ এর ফুল খুব ভোর থেকে সকালের মধ্যে ফুটে যায়। তাই পরাগায়ন এর উত্তম সময় হলো সকাল বেলার ৬-৭ টার মধ্যে সময়টুকু। এসময় পরাগায়ন করলে সাকসেস রেট বেশি হয়‌‌।

৬. রকমেলন বা ফুটি বা খরমুজ (পদ্ধতি-২): 

ভোর বেলায় ফুল ফুটে যায় রকমেলনের । আর পুরুষ ফুলের পরাগধানী খুব সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। অন্যদিকে স্ত্রী ফুল এর গর্ভমুন্ড ফুল ফুটার ২-৩ ঘন্টা পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। এজন্য রকমেলনের কৃত্রিম পরাগায়ন খুব সকাল থেকে ৮ টার মধ্যে সম্পন্ন করতে পারলে সাকসেস রেট সবোর্চ্চ পাওয়া সম্ভব হবে। 

৭. পটল (পদ্ধতি -১,২):

পটলের পুরুষ ও স্ত্রী গাছ আলাদা হয়ে থাকে আবার পুরুষ গাছে স্ত্রী গাছের চেয়ে ১৫-২০ দিন পর ফুল ফুটে। এজন্য পটল চাষে পুরুষ গাছ ১০-১৫ দিন আগে রোপণ করতে হয় আর ৯-১০ টি স্ত্রী গাছের জন্য একটি পুরুষ গাছ দরকার হয় ।‌ পটল ফুল ভোর বেলায় ফুটতে আরম্ভ করে সকাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে, তাই কৃত্রিম পরাগায়ন প্রক্রিয়া সকাল ৮ টার মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। একটি পুরুষ ফুল দিয়ে ৬-৭ টা স্ত্রী ফুল পরাগায়ন করা সম্ভব। 

৮. ঝিঙা (পদ্ধতি-১,২): 

ঝিঙের ফুল বিকেলের দিকে আলো কমতে থাকলে ফুটতে থাকে এবং রাত ৮ টার মধ্যে ফুটে যায়। আর পুরুষ ফুল একই সময়ে ফুটে কিন্তু পুরুষ ফুলের পরাগরাধী ফুল ফুটার ২-৩ দিন পরও সক্রিয় থাকে। 

তবে কৃত্রিম পরাগায়ন প্রক্রিয়া বিকাল থেকে সন্ধ্যা রাতের মধ্যে শেষ করা উত্তম। আর পরের দিন ভোর বেলাও করা যাবে, কিন্তু এক্ষেত্রে সাকসেস রেট কম হতে পারে। 

৯. চিচিঙ্গা (পদ্ধতি-২): 

সন্ধ্যা থেকে রাতের প্রথম ভাগে চিচিঙ্গা ফুল ফুটা শেষ হয় যা পরদিন সকাল পর্যন্ত তাজা থাকে। তাই, কৃত্রিম পরাগায়নের উত্তম সময় হলো সন্ধ্যা থেকে রাত ৮ টার মধ্যে। এছাড়া সকাল বেলাও করা যাবে। 

১০. কাঁকড়োল (পদ্ধতি -১,২): 

কাঁকরোল এর পুরুষ ও স্ত্রী ফুল আলাদা গাছে ফুটে এবং পুরুষ ফুল স্ত্রী ফুলের চেয়ে ৭-১০ দিন পর ফুটে। এজন্য পুরুষ গাছ ১০-১২ দিন আগে রোপণ করতে হয় ।‌ কাঁকরোল এর ফুল ভোর বেলার মধ্যেই ফুটে যায় এবং সারা দিন সক্রিয় থাকে। তাই, বিকেলের মধ্যে দিনের যেকোনো সময় কৃত্রিম পরাগায়ন করা যাবে । কিন্তু উত্তম হলো সকাল বেলা এতে সাকসেস রেট সবোর্চ্চ হয় । 

১১. চাল কুমড়া (পদ্ধতি -১,২): 

পুরুষ ও স্ত্রী উভয় ফুল খুব ভোর বেলায় ফুটে যায় এবং প্রায় সারা দিন উভয় ফুল তাজা থাকে। তবে, পরাগায়নের উত্তম হলো সকাল ৯ টার মধ্যে ‌। সকালের পরে করলে সাকসেস রেট কম হবে। 

১২. স্কোয়াশ (পদ্ধতি-১,২): 

স্কোয়াশ অনেকটা মিষ্টি কুমড়ার মতো যার পাতা ,ফুল,ফলে অনেক মিল রয়েছে। স্কোয়াশ এর ফুল ভোর বেলা থেকে ফুটতে শুরু করে এবং ফুল সন্ধ্যা পর্যন্ত ফুটে থাকে। তবে কৃত্রিম পরাগায়ন এর উত্তম সময় হলো সকাল ৯-১০  টা । স্কোয়াশ এর প্রাকৃতিক পরাগায়ন অনেক কম হয়ে থাকে তাই, ছাদে চাষ করলে স্কোয়াশ এর অব্যষই হাত পরাগায়ন করতে হবে। 

মরিচ, বেগুন ও টমেটোর কৃত্রিম পরাগায়ন (পদ্ধতি-৩): 

 টমেটো, বেগুন, মরিচ এর ফুল উভলিঙ্গ অর্থাৎ ফুলে একই সাথে পুংকেশর ও স্ত্রী কেশর বিদ্যমান। ফুল গুলোর মধ্য অংশে চারপাশে অনেক গুলো সমান লম্বা পুংকেশর দ্বারা বেষ্টিত অপেক্ষাকৃত লম্বা একটি গর্ভদন্ড দেখা যায়। এজন্য এদের কৃত্রিম পরাগায়ন ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। সঠিক ভাবে পরাগায়ন না হলে ফুল হলুদ হয়ে ঝরে যায়, তবে ফুল ঝরে পরার আরও বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এদের পরাগায়ন বৃদ্ধির জন্য ও কৃত্রিম পরাগায়নের জন্য – 

  •  অল্প সংখ্যক গাছ না করে সবসময় বেশি সংখ্যক মিনিমাম ৬-৭ টা গাছ করার চেষ্টা করতে হবে। আর গাছ গুলো পাশাপাশি রাখতে হবে। এতে পরাগায়ন হওয়ার চান্স বৃদ্ধি পায়। 
  •  গাছ গুলো বাগানের এমন জায়গায় রাখার চেষ্টা করতে হবে যেখানে বাতাস চলাচল করে। কারণ, বাতাস চলাচল পরাগায়নে সাহায্য করে। 
  •  ফুল হওয়ার পর গাছ গুলো দৈনিক নিয়ম করে ২-৩ বার হাত দিয়ে কাঁপানোর মতো (Vibration) করে বা ডাল গুলোর যেখানে ফুল রয়েছে তা নাড়িয়ে দিতে হবে। এতেও পরাগায়ন হওয়ার চান্স বৃদ্ধি পায়। 
  • কৃত্রিম পরাগায়নের জন্য রং তুলির ছোট ব্রাশ বা কটন বাড ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্রাশ বা বাড দিয়ে ফুলের পুংকেশর এর চারপাশে কয়েকবার ঘুরিয়ে যথেষ্ট পরিমাণ পুংকেশর মাখিয়ে নিয়ে তা স্ত্রী স্তবক এর অংশে আলতো করে ঘষে দিতে হবে। 

১৫ টি সবজির কৃত্রিম পরাগায়ন প্রক্রিয়া (চার্ট আকারে):

Leave a Reply